কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: কঙ্কালের চেহারা অদ্ভুত দর্শন এখানে দেবীর।তাই দেবী এখানে কঙ্কালেশ্বরী কালী হিসাবেই পরিচিত। মানবশরীরে শিরা-উপশিরা, অস্থি, পেশী, যেভাবে থাকে ঠিক সেইভাবে দেবীমুর্তি কষ্টিপাথরে খোদাই করা হয়েছে।


কালীমূর্তি এখানে কঙ্কালের রূপে রয়েছেন। তাই কঙ্কালেশ্বরী মা কালী বলেই পরিচিত শহর  বর্ধমানে। তাই প্রতি বছরই মহাধূমধাম সহকারে দেবীর আরাধনাতে বর্ধমানের সহ দূর-দূরান্তের মানুষজন আসেন। পুজো উপলক্ষে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। কালীপুজোর দিন গোধূলী লগ্নে পুজো হবার পর ভোগ খাওয়ানো হয় ভক্তদের।এছাড়াও মন্দিরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সামাজিক উৎসবও হয় এখানে।নিয়মিত ভাবে প্রচুর পর্যটকরা প্রতিনিয়ত আসেন।   


বর্ধমান শহরের কাঞ্চননগর এলাকায়  মা কঙ্কালেশ্বরীর কালীমন্দি অধিষ্ঠিত রয়েছে। মা এখানে অষ্টভূজা, তাই চামুণ্ডা রূপে দেবী কঙ্কালেশ্বরী পুজো হয় রীতি রেওয়াজ মেনেই। 


আরও পড়ুন, 'রুদ্রমূর্তি থেকে সংহাররূপী', কালীর নামেই লুকিয়ে আছে পুরাণের ভয়ঙ্কর সব কাহিনি


বর্ধমানের ইতিহাসবিদ সর্বজিত যশ জানান, মূর্তিটি একাদশ শতকের অর্থাৎ ১০০০ বছরের পুরানো।কথিত আছে,কাঞ্চমালার নাম অনুসারে জায়গাটির নাম কাঞ্চননগর।তাঁর দুই ছেলে সর্ত্যেশ্বের ও খর্গেশ্বর।সত্যেশ্বর সাধক ছিলেন।তাঁর এক বোন সাধিকা হয়ে হিমালয়ে চলে যান।বোনকে ফেরত আনার জন্য সত্যেশ্বর হিমালয়ে গেলে তাকে দেবীরুপে দেখা দেয় বোন।বর্ধমানে ফেরত এসে সেই রূপই কল্পনা করে শিল্পীকে দিয়ে মুর্তি তৈরী করান।পরবর্তী কালে মূর্তিটি জলের তলায় চলে যায়।


১৩২৫ বঙ্গাব্দের বন্যায় মুর্তিটি বাকা নদীর জলে ভেসে উঠে। খবর যায় তৎকালীন বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চাঁদের কাছে।তিনি মূর্তিটি নিয়ে এসে কাঞ্চননগরে ফাঁকা বিষ্ণু মন্দিরে মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করেন।সেই থেকেই নিয়মিত ভাবে মা কঙ্কালেশ্বরী দেবী এখানে  পূজিত হচ্ছেন। দেবীর কষ্টিপাথরের মু্র্তিটি শিল্পী এমনভাবে তৈরী করেছেন। যাতে মূর্তিটিতে গোটা দেহের কঙ্কাল যেমন বোঝা যায় তেমনি দেহের শিরা উপশিরা পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায় মূর্তিটিতে।ইতিহাসবিদদের ধারনা শিল্পীর শরীরতত্ত্ব সম্বন্ধে যথেষ্ট জ্ঞান ছিলো। দেবীর গলায় মুণ্ডমালা যেমন আছে তেমনি দেবীর এক হাতে ধরা আছে মনুষ্য মুণ্ড। বর্তমানে দেবী কঙ্কালেশ্বীর মন্দির ঘিরে তৈরী হয়েছে পর্যটন কেন্দ্র।