মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কমলকৃষ্ণ দে, কেতুগ্রাম: আট দিন কঠিন লড়াইয়ের পর দুর্গাপুরের (Durgapur) হাসপাতাল (Hospital) থেকে ছাড়া পেলেন স্বামীর হাতে কব্জি খোয়ানো কেতুগ্রামের (Ketugram) রেণু খাতুন (Renu Khatun)। তিনমাস পর কৃত্রিম হাত (Artificial Hand) নিয়ে শুরু হবে তাঁর নতুন লড়াই। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে দিদির বর্ধমানের (Burdwan) বাড়িতে উঠেছেন রেণু।
রেণু বলেন, যুদ্ধ, শুরু তো করতেই হবে। কাজে জয়েন করব। যারা আমার মতোই নির্যাতিতা দিনের পর দিন, তাদের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা আছে। যতটা পারব তাদের পাশে থাকব।
রেণু-কাহিনী
প্রত্যয়, সংকল্প, সহ্যশক্তি, পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের রেণু খাতুন এখন যেন লড়াইয়েরই আরেক নাম। ৮ দিনের যুদ্ধ শেষে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সোমবার ছাড়া পেলেন তিনি। রেণুর কথায়, খুব ভাল লাগছে। এতদিন চিকিৎসার পর আজ আমি বাড়ি ফিরতে পাচ্ছি। আর্টিফিসিয়াল হাত লাগাতে হবে। হিলিং হয়ে গেলে কাজে যোগ দেব। যত তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠব, তত তাড়াতাড়ি কাজে জয়েন করতে চাই।
একটা হাত চলে গেছে। ভালবেসে যাঁর হাত ধরেছিলেন, বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন সেই মানুষটাই না কি এক কোপে হাতটাই কেটে নিয়েছে। সরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরি পেয়ে যাওয়ায়, আর নাকি থাকবেন না স্ত্রী। অদ্ভুত এই আশঙ্কা থেকে স্ত্রী-র আস্ত হাতটাই কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। ভয়ঙ্কর শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার মধ্যেই গত কয়েকটা দিন কেটেছে রেণুর। সোমবার যখন তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন, তখন চিকিৎসকদের মুখেও স্বস্তি।
আরও পড়ুন, দিদির শেষকৃত্যের সময়ে ওই চিতার আগুনেই ঝাঁপ দিলেন ভাই! চরম সিদ্ধান্তে শোকস্তব্ধ পরিবার
কী জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা?
দুর্গাপুর আইকিউ সিটি হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জেন শশাঙ্ক কাঞ্চন বলেন, "এই সময় সবচেয়ে বেশি ভয় থাকে ইনফেকশনের সেই সঙ্গে থাকে ব্যথা। দুটোর কোনওটাই নেই। হাত নাড়াতে পারছে। পুরো পাওয়ার আছে।"
রেণু যেন আক্ষরিক অর্থেই পাওয়ার গার্ল। ইতিমধ্যেই তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। হাত খোয়ানোর পর রেণুর জন্য উপযুক্ত সরকারি চাকরি, হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ মেটানো এবং কৃত্রিম হাতের ব্যবস্থা করার যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছে রাজ্য সরকার। তার জন্য এদিন আরও একবার মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন রেণু। সেই সঙ্গে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে এদিন বর্ধমানে দিদির বাড়িতে ওঠেন রেণু। এবার কৃত্রিম হাত নিয়ে কাজে ফেরার নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি তাঁর।