পূর্ব বর্ধমান: পথ দুর্ঘটনা (road accident) মানে হয় অকালমৃত্যু (death) নয়তো ভয়ঙ্কর আঘাত (fatal injury)। উদ্বেগের বিষয় হল, দুর্ঘটনার এই  পরিসংখ্যান হইহই করে বেড়ে চলেছে। কী ভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব এগুলির? আশার আলো একদম যে নেই, তা নয়। সরকারি সংগঠন এবং বিভিন্ন সংস্থা এর মধ্যেই পথ দুর্ঘটনার বাড়বাড়ন্ত নিয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। সবচেয়ে বড় কথা হল, দুর্ঘটনার সংখ্যা কমাতে তারা কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে। পরিকাঠামো উন্নয়ন থেকে সচেতনতা বৃদ্ধি, চালকের আচরণে নজরদারি, সবটাই চলছে । 


পথ নিরাপত্তায় উদ্যোগ...
হালেই আদানি রোড ট্রান্সপোর্টের শাখা সংস্থা পানাগড় পালসিট রোড প্রাইভেট লিমিটেড (পিপিআরপিএল) (PPRPL) তরফে একটি পথ নিরাপত্তা প্রচার উদ্যোগের (Road Safety Awareness Campaign) আয়োজন করা হয়েছিল। গত ১৪ অক্টোবর থেকে ২০ অক্টোবর পূর্ব বর্ধমান (Purba Bardhaman) জেলায় এনএইচ-১৯ (NH 19) হাইওয়ের উপর  'সড়ক সুরক্ষা-জীবনরক্ষা' শীর্ষক ওই ক্যাম্পেন পালন করা হয়। সপ্তাহব্যাপী উদ্যোগটি উদ্বোধন করেছিলেন পূর্ব বর্ধমানের এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী, আরটিও অনুপম চক্রবর্তী,  এনএইচএআই-র প্রজেক্ট ডিরেক্টর স্বপন কুমার মল্লিক, এনএইচ-১৯-র ইন্ডিপেন্ডেনডেন্ট কনসালটেন্ট অরূপ কুমার মিশ্র, পিপিআরপিএল (হেড অপারেশনস অ্যান্ড মেনটেনেনস) লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অবসরপ্রাপ্ত) অরুণ শিবাপালন, পিপিআরপিএল (ম্যানেজার-অপারেশন) কে এম সিংহ, পিপিআরপিএল (সেফটি ম্যানেজার) হরকিৎ সিংহ-সহ অনেকে। সেখানেই লেফটেন্যান্ট কমান্ডার অরুণ শিবাপালন(অবসরপ্রাপ্ত) বলেন, 'পুরো উদ্যোগটি অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনও সাহায্য করেছে। এই এলাকাতেই গত ৬ মাসে ১৯ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। সাধারণ মানুষের মধ্যে ট্র্যাফিক আইন নিয়ে সচেতনতা তৈরি করাই আমাদের উদ্যোগের লক্ষ্য ছিল।'




কী হল অনুষ্ঠানে?
পানাগড় থেকে পালসিট পর্যন্ত এনএইচ-১৯ জাতীয় সড়কের নির্মাণ, যানচলাচল, রক্ষণাবেক্ষণ এবং তদারকির দায়িত্ব পালন করছে  পিপিআরপিএল। হাইওয়ের উপর এমন কোনও উদ্যোগ এই প্রথম নিয়েছে তারা। সংস্থার তরফে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার অরুণ শিবাপালন(অবসরপ্রাপ্ত) আরও বলেন, 'আমরা প্রতি বছর এরকম একটি অনুষ্ঠান করতে চাই। প্রশাসনও চায় আমরা আরও বেশি করে এমন কাজ করি। বিশেষত ট্রাকচালকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে আরও বেশি এমন উদ্যোগ চায় প্রশাসন।' সাত দিনের এই উদ্যোগে কী ভাবে যান চলাচল হওয়া উচিত তার নিয়মকানুন, নিয়ন্ত্রণহীন বা মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি না চালানো, ইত্যাদি নিয়ে সতর্ক করা হয়। পাশাপাশি কী করণীয় ও কী করণীয় নয়, সে নিয়েও সেফটি প্যামফ্লেট দেওয়া হয় যাত্রীদের। তাঁদের জন্য পালসিট টোল প্লাজায় বিনামূল্যে চোখ ও স্বাস্থ্য় পরীক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। দুর্ঘটনা কমাতে Reflective radium stickers বাইক, তিনচাকা ও বহুচাকার যানে লাগানো হয়। পালসিট টোল প্লাজা ছাড়াও পাল্লা রোড জাংশন, শক্তিগড় ট্রাক লে বে, শক্তিগড় মামা ধাবা, পালসিট মেমারি রোড হিন্দুস্তান ধাবা, উলহাস জাংশন, দার্জিলিং রোড, বুদবুদ এবং গলসি সার্ভিস রোডে পথ সচেতনতা অনুষ্ঠান করা হয়। জায়গায় জায়গায় সেফটি ব্যানার ও হোর্ডিং টাঙানো হয়েছিল। 


সামিল ছিল শিশুরাও...
শিশুদের মধ্যেও যাতে পথ নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা তৈরি হয়, সে জন্য পিপিআরপিএল-র তরফে দলুইবাজারের রসুলপুর স্কুলে একটি পথ নিরাপত্তা সংক্রান্ত সচেতনতা শিবির করা হয়। তাতে পড়ুয়া ও শিক্ষক মিলিয়ে ২২০ জন অংশ নিয়েছিলেন। কুইজেরও আয়োজন করা হয়েছিল ওই ক্যাম্পে যার পর বিজয়ীদের পুরস্কারও দেওয়া হয়। উদ্যোগের শেষ দিনে এনএইচএআই-র প্রজেক্ট ডিরেক্টর স্বপন কুমার মল্লিক এবং এনএইচ-১৯-র ইন্ডিপেন্ডেনডেন্ট কনসালটেন্ট অরূপ কুমার মিশ্রের উপস্থিতিতে চারাগাছ পোঁতা হয়। নিরাপত্তা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েই শেষ হয় গোটা উদ্যোগ যার মূলমন্ত্র ছিল, 'আর মৃত্যু নয়, আঘাত নয়, অজুহাত নয়।'


আরও পড়ুন:কালীপুজোর আগে ভয়াবহ ডেঙ্গি পরিস্থিতি, সবথেকে খারাপ অবস্থা কোন জেলার ?