কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান:  শহুরে জীবনে ঢেঁকির ব্যবহার প্রবাদবাক্যেই আটকে গিয়েছে। ঘরে ঘরে পিঠে পার্বণের (Poush Parbon) চলও এখন তেমন নেই। হাতেগোনা কয়েকটি বাড়িতে পিঠে তৈরি হলেও, বাজার থেকে কিনে আনা মেশিনে গুঁড়ো চালের প্যাকেটেই কাজ চলে যায়। কিন্তু আজও ঢেঁকি ছাঁটা চালের গুঁড়োয় পৌষ পার্বণে মেতে ওঠে গ্রাম বাংলার কিছু অংশ। পূর্ব বর্ধমানে শস্যগোলা সেই তালিকায় অন্যতম। বছর বছর ঢেঁকি ছাঁটা চালের গুঁড়োতেই সেখানে ঘরে ঘরে মহিলাদের হাতের কারুকার্যে তৈরি হয় আস্কে, সরুচাকলি, পাটিসাপটা, দুধপুলি, ভাজা এবং সেদ্ধ পিঠে (Bengali Pies)। খাদ্যরসিকদের মতে, ঢেঁকি ছাঁটা চালের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি পিঠের জুড়ি মেলা ভার।


রাতপোহালেই পৌষ সংক্রান্তি। তাই শেষবেলায় হইহই চলছে শস্যগোলায়। সমস্ত কাজ সরিয়ে রেখে, শেষ মুহূর্তে চাল কোটা চলছে ঢেঁকিতে। এক সময় যদিও পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই গ্রাম বাংলার মহিলারা ঘরে ঘরে ঢেঁকিতে চাল কোটা শুরু করে দিতেন। ঢেঁকিতে ভাঙা চাল গুঁড়িয়ে, তা দিয়েই তাঁরা তৈরি করতেন হরেক রকমের পিঠে। কিন্তু যন্ত্রচালিত সমাজে এখন ঢেঁকি এবং ঢেঁকি ছাটা চাল, দুই-ই বিলুপ্তির পথে। ঢেঁকি ছেড়ে গ্রাম বাংলার বহু মানুষও পৌঁছে যাচ্ছেন চালের কলে। তবে তারই মধ্যে হাতেগোনা কিছু গ্রামে পুরনো ঐতিহ্যই চলে আসছে। বাড়িতে সাবেকি ঢেঁকি আগলে রেখেছেন অনেকেই। যেমনটা আগলে রেখেছেন শিয়ালী এবং কোড়া গ্রামের মানুষজন।


আরও পড়ুন: Gangasagar News: কড়া নির্দেশই সার, গঙ্গাসাগর উপলক্ষে বাবুঘাটে উপচে পড়া ভিড়


তাই পার্বণের আবহে মহিলারা ঢেঁকিতে চাল ভেনে চলেছেন। আবার পৌষে ঢেঁকিতে চাল ভানার কাজে পুরুষরাও মহিলাদের সঙ্গে হাত লাগান। জামালপুরের শিয়ালী ও কোড়া গ্রামের রাস্তার পাশে একটি খামারে কাঠের ঢেঁকিতে চাল ঢেলে, অন্যপ্রান্তে ঢেঁকিতে পা দিয়ে চলছে চাল গুঁড়ো তৈরির কাজ। স্থানীয়দের দাবি, ঢেঁকিতে ছাঁটা চালের গুঁড়ি দিয়ে বানানো পিঠে-পুলির স্বাদটাই আলাদা। আর ঢেঁকিতে ছাঁটা চাল অনেকদিন ধরে রেখেও দেওয়া যায়।