রাণা দাস, কাটোয়া:  বিয়াল্লিশ ঘণ্টা রোপওয়ের ট্রলিতে আটকে থাকতে হয়েছে। বেঁচে বাড়ি ফিরতে পারবেন কিনা তাও নিশ্চিত ছিল না। কিন্তু বাড়িতে বাবা-মা রয়েছেন। তাঁদের কী বলবেন? এমনই নানা প্রশ্ন মাথায় ঘুরে বেরিয়েছিল তাঁর। তখন ওই অবস্থাতেই মাকে ফোন করেছিলেন অভিষেক নন্দন। 


কী বলেছিলেন তিনি?
মাকে ফোন করে বলেছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে রয়েছেন। সবসময় মোবাইলের টাওয়ার থাকবে না। তাই কথা বলা যাবে না। রোপওয়ে থেকে উদ্ধার পাওয়ার পর পুরো ঘটনার কথা পরিবারকে জানান তিনি। নববর্ষের আগে ছেলে বাড়ি ফেরায় খুশি কাটোয়ার নন্দন পরিবার।     


আতঙ্কের প্রহর:
ড্রোনের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে বিস্কুট আর জল। শুধু তার উপর নির্ভর করেই বেঁচেছিলেন সেই কদিন। বাড়ি ফিরে সেকথাই জানাচ্ছিলেন তিনি।  কাটোয়ার ওষুধ ব্যবসায়ী  মিলন নন্দন-এর ছেলে অভিষেক নন্দন বন্ধুর সাথে বেড়াতে গিয়েছিল ত্রিকূট পর্বতে। ত্রিকূট পর্বত থেকে রোপওয়ে থেকে নিচে নামার সময় ঘটে দুর্ঘটনা। আচমকায় রোপওয়ের ট্রলি দশফুট নিচে ঝুলে গিয়ে দোল খেতে লাগে। রোপওয়ের সব ট্রলি থমকে যায়। প্রথম দিকে অভিষেকরা জানতেই পারেনি তাদের রোপওয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছে। ভেবেছিল বিদ্যুৎ নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে। অনেক পরে জানতে পারে দুর্ঘটনার কথা। গোটা একদিন পর সোমবার দুপুর নাগাদ উদ্ধারকাজ শুরু হয়। উদ্ধারের সময় ১৯ নম্বর ট্রলির এক পর্যটক 'হারনেস' ছিঁড়ে হেলিকপ্টার থেকে মাটিতে পড়ে যাওয়ার পর অভিষেকরা আর হেলিকপ্টারে উঠতে রাজি হননি। বিয়াল্লিশ ঘণ্টা ধরে ড্রোনে করে আটকে থাকা পর্যটকদের  বিস্কুট -জল, ঠাণ্ডা পানীয় দেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুর বারোটা নাগাদ সেনাকর্মীরা অভিষেক ও তাঁর বন্ধু  নীরজকে উদ্ধার করেন।  হাসপাতালে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে তারপর তাঁদের ছাড়া হয়। তারপর দুদিন বন্ধুর বাড়িতে কাটিয়ে নববর্ষের ঠিক আগের দিন নিজের বাড়িতে ফেরে অভিষেক নন্দন। নতুন বছরের ছেলেকে ফিরে পেয়ে চোখের জল বাঁধ মানেনি পরিবারের লোকের। মিলন নন্দন বলেন, 'ওই ঘটনার কথা খবরে দেখেছি। কিন্ত ছেলে যে ওখানে আটকে আছে সেটা ভাবতেই পারেনি।'


আরও পড়ুন:  হাঁসখালিকাণ্ডে এবার ডিএনএ পরীক্ষার সাহায্য নেবে সিবিআই