কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান : জমিদারি আর নেই। তবে আভিজাত্যে বিন্দুমাত্র টান পড়েনি পূর্ব বর্ধমানের আমাদপুর জমিদার বাড়ির পুজোয়। নয় নয় করে ৩৬০ বছরে পড়ল পূর্ব বর্ধমানের আমাদপুর জমিদার বাড়ির পুজো। এখনও রীতি মেনে ষষ্ঠী থেকে সদর দরজায় বসে নহবত। তবে এ পুজোর সবচেয়ে নজরকাড়া ছবি হল, এখানে লক্ষ্মী, সরস্বতীর কোনও বাহন নেই। পরিবারের সদস্যরা মনে ভয়, বাহনে চড়ে তাঁরা যদি অন্য কোথাও চলে যান!


মেমারি থেকে দূরত্ব ৩ কিলোমিটার। রঙচটা দালানে এখনও পুজো এলেই নতুন রঙের গন্ধ পাওয়া যায়। রীতি মেনে ষষ্ঠী থেকেই সদর দরজায় বসে নহবত। প্রহর অনুযায়ী পরিবর্তন হয় রাগ ও রাগিনীর। বর্তমান দুর্গা মণ্ডপের পাশেই জমিদারদের কুলদেবতা রাধামাধবের মন্দির। শোনা যায়, রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি ছিলেন এই পরিবারেরই সদস্য দোহী সেনশর্মা। যিনি আবার কবি জয়দেবের সহকর্মী ছিলেন। পরবর্তীকালে মোঘলদের কাছ থেকে এই পরিবারের দুই ভাইয়ের একজন মজুমদার ও একজন চৌধুরী উপাধি পান। জমিদার চন্দ্রশেখর চৌধুরী কুলদেবতার মন্দিরের পাশে দুর্গা মণ্ডপ তৈরি করেন। সেখানেই ৩৬০ বছর ধরে পুজো হয়ে আসছে। আর যাতে বাড়ি ছেড়ে চলে না যান লক্ষ্মী-সরস্বতী, সেই জন্য বাহনহীন অবস্থাতেই পুজো হয়ে থাকে তাঁদের।


দেবীর নৈবেদ্যেও চমকের অভাব নেই। লুচি, বোঁদে, হালুয়া থেকে নারকেল নাড়ু, রসবড়া, হাজির থাকে সবই। আগে পুজোর সময় যাত্রার আসর বসলেও, এখন তা আর হয় না। তবে ষষ্ঠী থেকেই সদর দরজায় বসে নহবত। সারা বছর যেখানেই থাকুন না কেন, পুজোর সময় হাজির হন পরিবারের সদস্যরা। রথের দিন মায়ের গায়ে মাটি দেওয়া থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজোর প্রস্তুতি। তারপর পুজোর আগে গোটা পরিবার হাজির হলে ক্রমে চরমে উঠতে থাকে উমা বোধনের ব্যস্ততা।


আরও পড়ুন- প্রতিপদে পুজো শুরু, বর্ধমানে রাজপরিবারে মা পটেশ্বরী দুর্গা চণ্ডীরূপে পূজিতা


আরও পড়ুন-দেবী দুর্গার দর্শন পেয়েছিলেন বাড়ির কর্তা! ২৫০-এর পুজোর প্রস্তুতি চণ্ডীতলা জনাই রাজবাড়িতে