আবির দত্ত, কমলকৃষ্ণ দে ও রানা দাস: দুই ব্যবসায়ীর মধ্যে আর্থিক বিবাদ (financial dispute), আর তা মেটানোর নামে এবার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল বর্ধমান দক্ষিণের (Burdwan) তৃণমূল (TMC) বিধায়কের বিরুদ্ধে। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী (Chief Minister) এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee) চিঠি লিখেও সুরাহা না হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অবশেষে আদালতের দ্বারস্থ ব্যবসায়ী। যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শাসক বিধায়ক। 


হুমকির অভিযোগ তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে


অভিযোগকারী ব্যবসায়ী বিধানচন্দ্র কুণ্ডুর দাবি, 'আমার ছেলে কলেজে যেতে পারছে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছি। বাড়িতে পুলিশ পর্যন্ত পাঠাচ্ছে।'


দুই ব্যবসায়ীর মধ্যে আর্থিক বিবাদের জেরে এক ব্যবসায়ীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাসের বিরুদ্ধে। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের অফিসে বসেই হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।


অভিযোগকারী হলেন বর্ধমান পুলিশ লাইনের বাসিন্দা, পেশায় লোহার ছাঁট ব্যবসায়ী বিধানচন্দ্র কুণ্ডু। তাঁর দাবি, কাটোয়ার দুই ব্যবসায়ী মিঠুন শেখ ও তুফান শেখের কাছ থেকে লোহার ছাঁট কিনতেন। পরবর্তীকালে সেই লোহার ছাঁটের মান খারাপ হওয়ায়, ওই দু’জনের সঙ্গে আর ব্যবসা না করার সিদ্ধান্ত নেন। 


অভিযোগ, তারপর থেকেই গণ্ডগোলের সূত্রপাত। অভিযোগকারী ব্যবসায়ীর দাবি, 'আমি বলি ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে যাও। ও অফিসে সিনক্রিয়েট করে চলে যায়।' তাঁর দাবি, কাটোয়ার দুই ব্যবসায়ী তৃণমূল পরিচালিত কাটোয়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান লখিন্দর মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপর তাঁকে ডেকে পাঠানো হয় তৃণমূল পরিচালিত বর্ধমান পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর নাড়ুগোপাল ভকতের অফিসে। অভিযোগ সেখানেই হুমকি দেন বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক। 


বিধানচন্দ্র কুণ্ডুর কথায়, 'আমি অফিসে যাই। আমার বাবাও গিয়েছিলেন। বলে ২২ লক্ষ টাকা দিতে হবে। ও লখিন্দরের বন্ধু। ওকে টাকা দিতেই হবে। বলেন, আমি খোকন দাস বলছি। বর্ধমান জেলা থেকে তোর বাস তুলে দেব, গাঁজা কেস দিয়ে দেব।' এখানেই শেষ নয়। অভিযোগকারীর আরও দাবি, এরপর তাঁর অফিসে এসে জোর করে ৫ লক্ষ টাকার চারটি চেক সই করিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। 


অভিযোগকারী ব্যবসায়ীর কথায়, '৫ অথবা ৬ জুন হবে, তারিখটা ঠিক মনে নেই। আমার অফিসে ১০ জন এসে হুমকি দেয়। চেক লিখিয়ে নিয়ে যায়। আইসি, এসপিকে জানিয়েছি। আমার ছেলের নামে ৪২০ কেস দিয়েছে। বেরোতে পারছে না।'


ওয়ার্ড অফিসে বৈঠকের কথা স্বীকার করলেও, হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল বিধায়ক ও তৃণমূল কাউন্সিলর। 


বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাস বলেন, 'কাটোয়ার ব্যবসায়ীরা অনুরোধ করেছিল। আমি দু’পক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম। এরা দাবি করেছিল ২২ লক্ষ টাকা। ১৫ লক্ষ টাকায় রফা হয়েছিল। কোনও হুমকি দেওয়া হয়নি। ব্যবসা করলে তো টাকা দিতেই হবে। এসব মিথ্যে অভিযোগ। পরবর্তী ক্ষেত্রে চেক নিয়ে কী হয়েছে, আমার জানা নেই। আমি শুনেছি উনি হাইকোর্টে কেস করেছেন। আইনি পথে লড়ব।'


আরও পড়ুন: Kolkata News: রাত ৩টে থেকে অপেক্ষা, ইতিহাসের সাক্ষী হতে উপচে পড়ছে ভিড়, শিয়ালদা মেট্রো স্টেশন থেকে শুরু হল পরিষেবা


বর্ধমান পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর নাড়ুগোপাল ভগত বলেন, 'একসঙ্গে বসেছিলাম। কিন্তু কোনও হুমকি দেওয়া হয়নি।' সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ব্যবসায়ীও। অভিযুক্ত ব্যবসায়ী মিঠুন শেখ বলেন, '২৩ লক্ষ টাকা পেতাম। আমি বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। ২০ লক্ষ টাকায় রফা হয়েছে।'


কাটোয়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান লখিন্দর মণ্ডল বলেন, 'মিঠুন আমার পরিচিত। এসেছিল। টাকা পেত। আমি ওকে বলেছি বর্ধমান থানায় গিয়ে অভিযোগ কর। আমাকে কেন জড়ানো হচ্ছে জানি না।'


বর্তমানে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন এই লোহার ছাঁট ব্যবসায়ী। বিষয়টি নিয়ে পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।