মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর : শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুর। শিল্প দেবতার বিশ্বকর্মার পুজো মানেই এই অঞ্চলে ছিল মহোত্সব। পুজোর হুল্লোড়, আলোর রোশনাই, খাওয়া-দাওয়া, উল্লাস। ভাদ্র মাসের সংক্রান্তির এই দিনটির প্রতীক্ষায় থাকত ব্যস্ত শিল্পাঞ্চল। কিন্তু ২০২১ এ সেই দুর্গাপুরেই যেন শিল্পদেবতা চোখের জল ফেলছেন। ধুঁকছে শিল্প। ধুঁকছেন শিল্পাঞ্চলে কাজ করা শ্রমিকরা।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়ের স্বপ্নের এই শহরে একটা সময় শিল্পের সম্ভার ছিল।রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এম.এ.এম.সি,হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজার (Mineral & Allied Machinery Corporation (MAMC) and Hindustan Fertiliser Corporation (HFC)), বি.ও.জি.এল ( Bogl Durgapur) এর পুজোর জৌলুস ছিল। তেমন ছিল রাজ্য সরকারের অধীনস্থ সংস্থা দুর্গাপুর কেমিকেলস কারখানা বা ডিসিএল, দুর্গাপুর প্রজেক্ট লিমিটেড বা ডিপিএল - এর পুজোর রমরমা। এই দুর্গাপুরে রয়েছে ছোটো মাঝারি অনেক শিল্প।এই শিল্পনগরীর উপর ভরসা করে সংসার চলত অনেকের।
আরও পড়ুন :
'দেব-শিল্পীর আশীর্বাদ যেন দেশবাসীর সঙ্গে থাকে' বিশ্বকর্মা পুজোয় শুভেচ্ছা মোদির
এখানকার বিশ্বকর্মা পুজো দূর দূর থেকে মানুষ বাসে করে দেখতে আসত। শুধু পুজো দেখতে নয়, কারখানার উত্পাদন পদ্ধতি দেখাও অন্যতম আকর্ষণ ছিল। আজ সেসব ইতিহাস। একটা একটা করে বন্ধ হতে থাকল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি।বন্ধ হল যেমন কোলিয়ারির যন্ত্রাংশ তৈরীর কারখানা এম.এ.এম.সি। সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিশেষ ধরণের কাচ তৈরীর কারখানা বি.ও.জি.এল, ধীরে ধীরে রুগ্ন হতে হতে বন্ধ হল একদিন। দুর্গাপুরে সার তৈরীর কারখানা হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজার কারখানায় উত্পাদন বন্ধ হল। কারখানা বাঁচানোর লড়াইয়ে দাঁতে দাঁত চেপে লড়ছেন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থা এ.এস.পি ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিকরা। সব মিলিয়ে শ্মশানের চেহারা নিয়েছে শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুর। বিশ্বকর্মাপুজোর ধূমধামও আজ আর নেই।
শ্রমিকরা পেটের তাগিদে কেউ পেশা বদলেছেন, কেউ কাজ হারানোর যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথও বেছে নিয়েছেন। কেউ আবার আশায়, আবার একদিন সুদিন ফিরবে। রাজনৈতিক দল গুলির দোষারোপ , পাল্টা দোষারোপের মধ্যেই আশায় রয়েছে দুর্গাপুর। আশা রাখছে আবার একদিন হাসবে শিল্পশহর। সাড়ম্বরে পূজিত হবেন বিশ্বকর্মা।