বিটন চক্রবর্তী, পূর্ব মেদিনীপুর: ২০১২ সালের নিয়োগে পূর্ব মেদিনীপুরে প্রাথমিকে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের দিতে হচ্ছে মুচলেকা। মোট ৩ হাজার ৯২৪ জনকে দিতে হচ্ছে মুচলেকা। থানায় গিয়ে ওই শিক্ষকদের জমা দিতে হচ্ছে মুচলেকা। এ সংক্রান্ত নির্দেশ এসপি-কে পাঠিয়েছেন জেলাশাসক।


কী নিয়ে মুচলেকা:
২০১২-র নিয়োগ প্যানেলে কোনও আত্মীয়স্বজন ছিল কি না, তা জানতে চেয়ে নেওয়া হচ্ছে মুচলেকা। এই ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ শিক্ষকদের একাংশ। যে সময় স্কুলে পড়ানোর কথা। সেই সময় থানায় এসে মুচলেকা দিতে হচ্ছে। যে সময় নিয়োগ হয়েছে সেই সময় নিয়োগের বোর্ডে তাঁদের কোনও আত্মীয় ছিল না বলে মুচলেকা দিতে হচ্ছে। 


২০১২-য় টেট ছাড়া নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছিল। বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে হয় পরীক্ষা ও নিয়োগ। ১১ জনের ইন্টারভিউ বোর্ডে ছিলেন দিব্যেন্দু অধিকারী। ২০০৯-এর প্যানেলের ভিত্তিতে হয়েছিল নিয়োগ। ওই বোর্ডে ছিলেন শিউলি সাহা, অর্ধেন্দু মাইতিও।


শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে গত ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে তোলপাড় গোটা রাজ্য। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে গ্রেফতার হয়ে জেলেই দিন কাটছে শাসক দলের একাধিক হেভিওয়েটের। এই পরিস্থিতিতে, পূর্ব মেদিনীপুরে প্রাথমিক শিক্ষকদের কাছ থেকে হলফনামা জমা নেওয়ার কাজ শুরু করল জেলা শিক্ষা দফতর। ২০১২ সালে প্রাথমিকে চাকরিপ্রাপ্ত ৩৯২৪ জনকে দিতে হচ্ছে 'মুচলেকা'।  ইন্টারভিউ বোর্ডে তাঁদের কোনও আত্মীয়-পরিজন ছিলেন কি? থানায় গিয়ে জানাতে হচ্ছে মুচলেকা দিয়ে। অন্য কোনওভাবে কি জমা নেওয়া যেত না 'মুচলেকা'? প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষকরা। 


এক শিক্ষক অভিজিৎ খাটুয়া বলেন, 'এই প্রফেশনে থানামুখী হয়ে যখন আমাদের এই কপিগুলো জমা করতে হয়, তখন তো লাগে। সমাজে এরকম একটা কাজ করছি যে থানায় গিয়ে আমাদেরকে মুচলেকা দিতে হচ্ছে। এগুলো করব না পাঠনপাঠন দেখব।'


পূর্ব মেদিনীপুর  ১ -এর প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, 'থানাকে ডিআইবিকে বলেছেন, ডিএম কে বলেছেন...ডিআইবিকে পুলিশকে বলেছে। এটা কোনও মুচলেকার বিষয় না। পুলিশ এনকোয়ারি করে দেখছে সিলেকশন কমিটির কারও সাথে ২০১২ সালে নিযুক্ত শিক্ষকদের কোনও ক্লোজ রিলেশন আছে কিনা। এটা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।'


২০০৯ সালে বাম সরকারের আমলে পূর্ব মেদিনীপুরে ৩৯২৪ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। রাজ্যে পালাবদলের পর ২০১২ সালের নভেম্বরে নিয়োগ পান তাঁরা। ১১ জনের ইন্টারভিউ বোর্ডে ছিলেন তৃণমূল বিধায়ক থেকে পদাধিকারীরা। সিলেকশন কমিটিতে ছিলেন, দক্ষিণ কাঁথির তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক দিব্যেন্দু অধিকারী, হলদিয়ার তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক শিউলি সাহা, ভগবানপুরের সেই সময়ের তৃণমূল বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতি, পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পরিষদের তৎকালীন সহ সভাধিপতি মামুদ হোসেন। এই শিক্ষকদের নিয়োগ নিয়ে পরবর্তীকালে মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। তদন্ত করে শিক্ষা দফতরকে ৩৯২৪ জনের নিয়োগের বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেয় আদালত।  ২৮ শে জুলাই রাজ্য শিক্ষা দফতর সেই বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এরপর, বুধবার থেকেই জেলার সমস্ত থানার আধিকারিকরা সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষকদের ফোন করে থানায় এসে মুচলেকা দেওয়ার কথা জানান। যা নিয়ে চূড়ান্ত অসন্তোষ ছড়িয়েছে শিক্ষক মহলে। 


আরও পড়ুন: অস্ত্র আইনে গ্রেফতার নন্দীগ্রামের BJP মণ্ডল সভাপতি