বিটন চক্রবর্তী, পূর্ব মেদিনীপুর : একেই বলে কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ। একই জেলা। একই গ্রাম। অথচ ভাগ্য কতটা আলাদা। লটারি কেটে একটি ঘরে বয়ে গেল খুশির বন্যা। অন্যদিকে চিরশূন্য হল আরেক ঘর। বিপরীত দুটি ঘটনাই ঘটেছে তমলুকের ডিমারিতে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক থানার রুঘুনাথপুর ১ নাম্বার গ্রাম পঞ্চায়েতের ডিমারির মহিষদা গ্রামের সুরজিৎ চন্দ্র। লটারির টিকিট কাটার নেশা তাঁর বরাবরের। কোনওদিন ঠিক ফিরবে ভাগ্য, এই আশায় একের পর এক লটারি কেটে গিয়েছেন তিনি। নির্দিষ্ট দিলে মিলিয়ে দেখেছেন নম্বর। খুলল কি ভাগ্য ? চোখ খুঁজেছে নিজের নাম তন্নতন্ন করে। না, নিজের নাম কোনও দিনই খুঁজে পাননি সুরজিৎ। তবু আশা ছাড়েননি। ভাবেছিলেন ভাগ্য একদিন ঠিকই সহায় হবে। ঘরে আসবে লক্ষ্মী। না শেষ পর্যন্ত সঙ্গে দেয়নি ভাগ্য। লটারি কাটতে কাটতে কার্যত নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলেন তিনি। না জ্যাকপট লাগেনি। সেই কারণেই গত সোমবার আত্মঘাতী হন ৩২ বছরের সুরজিৎ চন্দ। পরিবারের দাবি, প্রতিদিন শতাধিক টাকার লটারি কাটতেন তিনি প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে যান তিনি। অবশেষে আত্মহত্যা। পরিবার সূত্রে খবর, গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন সুরজিৎ।
আরও পড়ুন :
ঝালদায় কাকার মৃত্যুর তদন্তে এগিয়ে আসা তপন কান্দুর ভাইপো মিঠুনকেই প্রার্থী করল কংগ্রেস
অন্যদিকে ঠিক তার পরের দিন সেই লটারিই আবার ভাগ্য ফেরাল সুরজিতের গ্রামেরই আরেকজনের। লটারির টিকিট কেটে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে গেলেন মৎসজীবী শক্তি বর্মন। ডিমারির পাকুড় গ্রামের ফুটপাতে মাছ বিক্রি করে সংসার চলে মৎসজীবী শক্তি বর্মনের। দিন আনা দিন খাওয়া ঐ মৎস্যজীবী লটারিতে এক কোটি টাকা পায়। স্বাভাবিকভাবেই খুশির হাওয়া শক্তি বর্মনের পরিবারে। শক্তি বর্মন জানিয়েছেন, তিনি লটারিতে এক কোটি টাকা পেয়ে ভীষণ খুশি। সেই সঙ্গে লটারি কেটে নিঃস্ব হয়ে আত্মহত্যার ঘটনাকে দুঃখ জনক বলেই জানান তিনি। কোটি-কোটি টাকার স্বপ্ন সফল হওয়ার পর শক্তি বলেন, ' লোভ আর নেশা ভালো না। লোভ আর মানুষকে বিপথে পরিচালিত করতে পারে । আর শেষে মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। কোনও জিনিসের নেশা ভাল না। এর মধ্যেই তিনি বললেন, ‘‘এই টাকায় বাকি জীবনটা ভাল ভাবে কাটিয়ে দেব বলেই আশা করছি।”
এক পরিবারে খুশির হাওয়া, অন্য পরিবারে বিষাদের ছায়া। তবে সুরজিতের মৃত্যুর ঘটনায় আনন্দ অনেকটাই ম্লান শক্তি বর্মনের পরিবারে।