বিটন চক্রবর্তী, পূর্ব মেদিনীপুর: এক পাড়ায় বাস, প্রতিদিন দেখা সাক্ষাৎ। কিন্তু তলে তলে প্রতিবেশির শিশুর উপর নজরদারি। সুযোগ পেয়েই একরত্তিকে নিয়ে চম্পট। অপহরণের পর মোটা টাকার মুক্তিপণও দাবি (Child Kidnapping)। কিন্তু পুলিশের তৎপরতায় অভিসন্ধি পূরণ হল না। একেবারে হিন্দি ছবির রোমহর্ষক দৃশ্যের অনুকরণে অপহরণকারী যুবকের হাত থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করল পুলিশ। আর এই গোটা পর্বে টানটান উত্তেজনার সাক্ষী থাকলেন স্থানীয়রা (Police Chasing Child Kidnapper)।


ঘরে ঢুকে শিশুকে অপহরণ


পূর্ব মেদিনীপুরের (Purba Medinipur News)  ঘটনা। ১১ মাসের শিশুপুত্রকে নিয়ে ঘরকন্না এক মহিলার। ছেলে সামলানোর পাশাপাশি সংসারের যাবতীয় কাজকর্মর দায়িত্বও তাঁর কাঁধে। শুক্রবারও তার অন্যথা হয়নি। শিশুপুত্র যখন খেলায় মগ্ন, সেই ফাঁকে কাজ সেরে নিচ্ছিলেন তার মা। আচমকা পায়ের শব্দে সম্বিত ফেরে তাঁর। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই একরত্তিকে কোলে নিয়ে উধাও প্রতিবেশি যুবক শেখ সিরাজুল ওরফে সুবল।


চোখের সামনে ছেলেকে অপহৃত হতে দেখে তখন পাগলপারা অবস্থা ওই মহিলার। বাড়ির বাইরে ছুটে বেরিয়ে দেখেন ছেলেকে নিয়ে উধাও অপহরণকারী। মোটর সাইকেলের সামনের দিকে বসিয়ে, গামছার সঙ্গে শিশুটিকে বেঁধে সুবল চম্পট দেন বলে অভিযোগ। আশেপাশের কয়েক জন রাস্তায় তাঁকে মোটর সাইকেল ছুটিয়ে পালাতে দেখলেও বিষয়টি বোধগম্য হয়নি কারও। ওই মহিলার চিৎকার শুনে তাই থতমত খেয়ে যান সকলে। ছুটে আসেন পাড়া-প্রতিবেশিরা। সব জানতে পেরে শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। কিন্তু নাগাল মেলেনি সুবলের।


আরও পড়ুন: Birbhum Violence: বগটুই গ্রামে সিবিআই আধিকারিকরা, নুমনা সংগ্রহ ফরেন্সিক দলের


তাই শেষমেশ থানা-পুলিশের দ্বারস্থ হয় গোটা পরিবার। তার কিছু ক্ষণ পরই সুবলের কাছ থেকে ফোন পান শিশুটির মা। তাঁর কাছে সুবল ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন বলে অভিযোগ। শিশুটির মায়ের দাবি, টাকা নিয়ে এলে ছেলেকে হাতে নিরাপদে মায়ের কোলে তুলে দেবেন বলে জানান। তাঁকে সুবল ১১৬বি জাতীয় সড়ক সংলগ্ন শীতলপুরে টাকা নিয়ে যেতে বলেন সুবল।


রোমহর্ষক বাইক দৌড় পুলিশ-অপহরণকারীর


বিষয়টি পুলিশকে জানান শিশুটির মা। সেই মতো ওই এলাকায় তল্লাশি অভিযানে বেরোয় নন্দকুমার থানার ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ। তাদের দেখে ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে মেচেদার দিকে পালাতে উদ্যত হন সুবল। এর পরই শুরু হয় রোমহর্ষক চোর-পুলিশ খেলা। সুবল মোটর সাইকেলের গতি যত বাড়ান, পুলিশও মোটরসাইকেলের গতি বাড়িয়ে ধাওয়া করতে থাকে তাঁকে।


শেষমেশ স্থানীয়দের সহযোগিতায় তমলুকে সুবলের নাগাল পায় পুলিশ। ধৃতের থেকে নিরাপদেই শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। সুবলের মোটর সাইকেলটি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে সুবল। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।