সন্দীপ সমাদ্দার, পুরুলিয়া: ২০২২-এর পুরসভার (Municipal Election 2022) নির্বাচনে তৃণমূলের পাশাপাশি 'গৃহযুদ্ধ'  (Internal Trouble) বিজেপিতেও (BJP) । আর তারই আঁচ জেলা পুরুলিয়ায় (Purulia)। ‘কাছের মানুষ বনাম কাজের মানুষ’ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে দলের নীতি, আদর্শ প্রসঙ্গে সোশ্যাল সাইটে মুখ খুললেন পুরুলিয়ার বিজেপি নেত্রী (BJP Leader) ঈশিকা ওঝা।

  


রাজ্যে ১০৮ পুরসভায় নির্বাচনের আগে জেলায় জেলায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই যেন জটিল হয়ে উঠছে। তৃণমূলের পর বিজেপি। তাই, দলীয় প্রার্থী তালিকায় পরিবার তন্ত্রের অভিযোগ তুলে এবং নোংরা রাজনীতির বিরোধীতা করে, দলের ভূমিকা নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় তুলছেন দলেরই কর্মী। পুরুলিয়ার বিজেপি নেত্রী ঈশিকা ওঝার সোশ্যাল সাইটে পোস্ট করা ভিডিও অন্তত তেমনই বলছে।পৌরসভা নির্বাচনের আগে দলের এই নেত্রীর বিস্ফোরক মন্তব্য কার্যত অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব কে। ঠিক কি বলেছেন ঈশিকা দেবী?


ক্ষোভের সুরে তিনি বলেছেন, যখন বিজেপির ঝান্ডা ধরার লোক ছিল না, তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলের পাশে দাঁড়িয়েছেন মোদিজীর আদর্শকে বাংলায় ছড়িয়ে দিতে। ঘর, সংসার ফেলে, দলের জন্যে পুলিশের হুমকি, মামলা, আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের লাঠির আঘাতে হাসপাতালে যাওয়া, এসব ভোগ করতে হয়েছে। অথচ, আজ তাঁকে এবং তাঁর মতো কর্মীদেরকেই দলে কোণঠাসা করে রাখা হচ্ছে। পঞ্চায়েত, লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে দল সাফল্য ছিনিয়ে আনলেও, সেটা একজনের জন্য হয়নি। তা হাজার হাজার কর্মী সমর্থকের পরিশ্রমের ফল ,এমনই দাবি নেত্রীর। অথচ, আজ দল তা অস্বীকার করছে। ফলে অপমানিত বোধ করছেন তিনি। পাচ্ছেন না মর্যাদা। সমস্যা তুলে ধরার কোনো জায়গা নেই। তাই, বাধ্য হয়ে সোশ্যাল সাইটে পোস্ট করার সিদ্ধান্ত। 


একইসঙ্গে বলেন, যাঁরা প্রকৃত কর্মী তাঁদের এক সম্মান দেওয়া হোক।‌ টাকা বা পদের লোভ নেই, থাকলে নির্দলে প্রার্থী হয়ে দাঁড়াতে পারতেন, সাফ জানালেন বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেত্রী ঈশিকা ওঝা।


পাশাপাশি, সোশ্যাল সাইটে ও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দলের আদর্শ, নীতি প্রসঙ্গে নেতিবাচক কথা বলার কারণে তার রাজনৈতিক কেরিয়ার শেষ হয়ে গেল বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে, বক্তব্যের শেষেও,নেত্রীর গলায় দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সুর স্পষ্ট। বললেন, বিরোধী দলের নোংরামির প্রতিবাদ করার আগে নিজের দল থেকেই তা শুরু করা উচিৎ, তাই নিজের বাড়ি তথা দল থেকেই সাফাই অভিযান শুরু করলেন বলে দাবি তাঁর। 
এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে, দলের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথেরিয়া। তাঁর বক্তব্য, বিজেপিতে কোনো সংগঠন নেই। যাঁরা কাজ করতে চান, তাঁরা দলে সেই সুযোগ পান না। তারা লবিবাজির শিকার হন বলেও কটাক্ষ তাঁর।


এদিকে, দলীয় নেতৃত্ব অস্বস্তি পড়ায় বিপাকে জেলা বিজেপি সভাপতি বিবেক রাঙা। তিনি বলেন, টিকিট না পাওয়াকে কেন্দ্র করেই এই ক্ষোভ। যদিও দলের অন্দরে  অসন্তোষ বা কোন্দলের কথা তিনি অস্বীকার করেছেন।


প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, একুশের নির্বাচনে হারের পর থেকে বিজেপিতে একের পর এক ধাক্কা নেমে এসেছে। বঙ্গ বিজেপিতে বিদ্রোহের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলেছে। কিন্তু সেইসবকে পেছনে ফেলে পুরভোটে বাংলায় নিজেদের পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। আর তারই মাঝে, দলীয় কর্মীদের এহেন বেঁকে বসার ঘটনা, বিজেপির আভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বে যেন আরো বেশি জল বাতাস দিচ্ছে। ফলে সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব।