সুদীপ চক্রবর্তী, উত্তর দিনাজপুর: মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে এল নিখোঁজ গৃহবধুর পচাগলা মৃতদেহ। আর এই মৃতদেহ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গেই প্রকাশ্যে এল এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। অভিযোগ, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে সৎ মাকে খুন করে মাটিতে পুঁতে দিয়েছে ছেলেই! এই ঘটনা জানাজানি হতেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে সৎ ছেলে সহ চার জনকে। ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য রায়গঞ্জে।


কী ঘটেছে? 


মৃতার নাম অর্চনা বর্মন, বয়স ২৮। দীর্ঘ প্রায় আটমাস যাবৎ ওই মহিলা নিখোঁজ ছিলেন। বুধবার মধ্যরাতে রায়গঞ্জের কমলাবাড়ি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের কলোনীপাড়া গ্রামে জমির ক্যানেলের মাটি খুড়ে বস্তাবন্দী মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।  


প্রেক্ষাপট


জানা যায়, রায়গঞ্জের রামপুরের বাসিন্দা অর্চনার বিয়ে হয়েছিল কলোনীপাড়ার অজয় বর্মনের সঙ্গে। অর্চনা ও অজয় দুজনেরই এটি দ্বিতীয় বিয়ে ছিল। বছর খানেক আগে একটি মামলায় গ্রেফতার হওয়া অজয়ের মৃত্যু হয় বিচারাধীন অবস্থাতেই। এর কিছুদিন বাদেই বাড়ি থেকে আচমকা অর্চনা নিখোঁজ হয়ে যান বলে অভিযোগ দায়ের হয় রায়গঞ্জের কর্নজোড়া ফাঁড়িতে। এদিকে পুলিশ তদন্তে নেমে সৎ ছেলে গোপাল বর্মনকে গ্রেফতার করে। 


কিন্তু তথ্য প্রমাণ না মেলায় তাঁকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। এদিকে দিন কয়েক আগে স্থানীয় তৃনমুল নেত্রীর কাছে দুই যুবক গিয়ে অর্চনাকে খুনের ঘটনার বৃত্তান্ত বলে। এমনকি তারাই যে প্যাকেটবন্দী মৃতদেহ মাটি খুঁড়ে পুঁতে দেয় তাও জানায় তারা। একদল দুষ্কৃতি এই কাজ করার সময় তারা দেখে নেওয়ায় তাঁদের আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখালেই তাঁরা বাধ্য হয়ে এ কাজ করে এমনটাই তৃণমুল নেত্রীর কাছে জানায় বলে দাবী। 


আরও পড়ুন, তীব্র গরম, নেই জল-খাবার; চরম দুর্ভোগের ১১ ঘণ্টা পর উঠল ডোমজুড়ের পথ অবরোধ


এরপর ওই তৃণমূল নেত্রী স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে জানালে বুধবার বিকেল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত কলোনীপাড়ায় জমির ভেতরে ক্যানেলে মাটি খুড়ে মৃতদেহ উদ্ধারে নামে পুলিশ। কিন্তু রাতে মাটি খুঁড়ে প্রথমে বস্তাবন্দি ছোট পশুর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। 


এরপর সন্দেহের বশেই পুলিশ ওই এলাকায় খনন শুরু করে। বুধবার রাত প্রায় তিনটে নাগাদ প্লাস্টিকের বস্তায় মোড়ানো মানব শরীরের পচাগলা মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্তে নেমে জানা যায় সেটি নিখোঁজ অর্চনা বর্মনের মৃতদেহ। এরপর প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানের ভিত্তিতে এদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে মৃতার সৎ ছেলে গোপাল বর্মন সহ বসন্ত বর্মন, অচিন্ত্য বর্মন ও ফুলেশ্বর মাহাতো নামে চার অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে পুলিশ। 


তাদের রায়গঞ্জ জেলা আদালতে তোলা হলে ধৃতদের ৭ দিনের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এদিকে বিকেল হয়ে যাওয়ায় মৃতদেহের ময়না তদন্ত হয়নি। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।