পার্থপ্রতিম ঘোষ, আশাবুল হোসেন ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: শনিবার রাতে 'নিখুঁত অপারেশনে' খুন হয়েছিলেন কয়লা মাফিয়া রাজু ঝা। শক্তিগড়ে রাস্তায় উপর রাজুর গাড়ি ঘিরে পরপর গুলি করেছিল দুষ্কৃতীরা। শনিবারের ওই ঘটনার পর আজ বুধবারের সকাল। এখনও ওই ঘটনায় অধরা আততায়ীরা। একাধিক সন্দেহ থাকলেও, খুনের আসল কারণ নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তদন্তকারীরা। এরই মাঝে শক্তিগড়ে ঘটনার জায়গায় ঘুরে দেখেছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। খুনের পরে যে গাড়িটি ফেলে পালিয়েছে আততায়ীরা সেটিও পরীক্ষা করা হয়। 


খোলা রাস্তার উপর কয়লা মাফিয়া রাজু ঝা ওরফে রাজেশ ঝা-কে খুনের পর ৫ নম্বর দিন সকালেও কার্যত অন্ধকারে পুলিশ। কোথায় গিয়েছে আততায়ীরা, কোন পথ দিয়ে পালিয়েছে, কেন খুন করা হল কয়লা মাফিয়াকে- তা এখনও স্পষ্ট নয়। মঙ্গলবার শক্তিগড়ে খুনের জায়গা ঘুরে দেখেছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। ওই এলাকা ঘুরে দেখার পর, শক্তিগড় থানায় যান তাঁরা। এখানেই রাখা রয়েছে, খুনের সময় আততাতীদের ব্যবহার করা ব্যালেনো গাড়িটি। সেটিকে পরীক্ষা করে দেখা হয়। এই ধরনের হত্যার ঘটনায় ফরেন্সিক পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়। ফরেন্সিক পরীক্ষায় উঠে আসা সূত্র ধরেই অনেকসময় নাগাল পাওয়া যায় আততায়ীদের। সেই কারণেই ব্য়ালেনো গাড়ি ও ঘাতক গাড়িটিকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। গোপনীয়তা রক্ষায় ত্রিপল টাঙিয়ে পরীক্ষা করা হয়।


'নিখুঁত' পরিকল্পনা:
সূত্রের দাবি, রাজু ঝা খুনের আততায়ীদের পরিকল্পনা এতটাই নিখুঁত ছিল যে, ব্যালেনো গাড়িটির ইঞ্জিন এবং চেসিস নম্বর নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, গাড়িতে যে ৫টি নম্বর প্লেট উদ্ধার হয়েছে, তার মধ্যে ৪টির রেজিস্ট্রেশন অন্য কোনও ব্যালেনো গাড়ির নামে। তাহলে, রাজু-খুনে আততায়ী যে ব্যালেনো গাড়ি ব্যবহার করেছিল, তার আসল মালিক কে? আসল নম্বরই বা কী? তা খুঁজে বের করতে, এদিন গাড়িটি পরীক্ষা করা হয়। মতামত নেওয়া হয়েছে গাড়ির প্রস্তুতকারী সংস্থার কর্মী এবং অটোমোবাইল এক্সপার্টদের। সূত্রের দাবি, আসল নাম খুঁজে পেলে, ব্যাক ক্যালকুলেশনের মাধ্য়মে আততায়ীদের খুঁজে রহস্য ভেদের চেষ্টা করা হবে। এর পাশাপাশি আততায়ী ও মাস্টারমাইন্ডের খোঁজ পেতে মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছে রাজু ঝার মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড চেয়ে পাঠানো হয়েছে।


ভিনরাজ্যেও খোঁজ:
আততায়ীদের খোঁজে ভিনরাজ্যেরও গেছিল পুলিশ। কিন্তু, তাঁদের ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। এর মধ্যেই এদিন দিঘার কর্মিসভা থেকে বিজেপিকে নিশানা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, 'পরশু তো এক কোল মাফিয়া খুন হয়েছে। কই মুখ খুলুন। এবার কেন কথা বলছেন না? ওই হোটেলে কে কে ছিল? কোন কোন মন্ত্রী দেখা করেছিল? কাদের টাকা দিয়েছেন? তা নিয়ে মুখে কুলুপ? একদিন এমন আসবে, তোমাদের মুখে জাল লাগিয়ে দেব।' পাল্টা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, 'এত ঘণ্টা হয়ে গেল, কেন গ্রেফতার হল না, মমতা বা অভিষেক এসপিকে বলেনি গ্রেফতার করতে। সেই কারণে ধরা হয়নি।'


এই চাপানউতোরের মধ্যেই তদন্তকারীদের অনুমান, কয়লা মাফিয়া খুনে অন্যতম কারণ লুকিয়ে রয়েছে কয়লা-সংক্রান্ত ব্যবসার অন্দরেই।


আরও পড়ুন: পুলিশি হেফাজতে নাবালকের মৃত্য়ু, পরিবারকে ১৫ দিনে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের