আবির দত্ত, কলকাতা: এই রাজ্যে এসে প্রথমে কলকাতার লেনিন সরণির একটি হোটেলে উঠেছিল আব্দুল মথিন আহমেদ ত্বহা ও মুসাভির হুসেন শাজিব, খবর এনআইএ সূত্রে। গত ১ মার্চ বেঙ্গালুরুর ক্যাফেতে বিস্ফোরণের (Rameshwaram Cafe blast Arrest) পর এই দুজনকে গরু-খোঁজা খুঁজছিলেন জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (NIA Arrest Rameshwaram Cafe blast Arrest From West Bengal) আধিকারিকরা। অবশেষে, আজ, পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র থেকে হদিস মিলল তাদের। 


যা জানা গেল...
সূত্রের খবর, গত ১৩ মার্চ প্রথমে লেনিন সরণির হোটেলে উঠেছিল ২ সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গি। কিন্তু মোটে ১ দিনের জন্য কলকাতায় ছিল মুসাভির ও আব্দুল। তার পর, গত ২৮ দিন ধরে বাংলায় ঘুরেছে দুজন। ২-৩ দিন আগেই নিউ দিঘার হোটেলে ওঠে তারা। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, দার্জিলিং থেকে পর্যটক পরিচয় দিয়ে উঠেছিল ২ সন্দেহভাজন জঙ্গি। এমনকি হোটেলের রেজিস্টারে নাম লিখেও কেটে দেয় তারা। আরও জানা গিয়েছে, গত ২৮ দিন ধরে ভুয়ো ড্রাইভিং লাইসেন্স ও আধার কার্ড বানিয়ে ঘুরেছে দুজন। বিঘ্নেশ ওরফে সুমিত নামে ভুয়ো আধার কার্ড বানিয়েছিল আবদুল, খবর সূত্রে। মহম্মদ জুনের শাজিব নামে ভুয়ো ড্রাইভিং লাইসেন্স বানিয়েছিল মুসাভির, জানা গিয়েছে এমনও। ধৃত ২ জনের মাথার দাম ছিল ১০ লক্ষ টাকা বলে ঘোষণা করে এনআইএ। 


আরও যা...
তদন্তে আরও যা জানা যাচ্ছে, কলকাতার ৪টি হোটেল, দিঘার ১টি হোটেলে 'জঙ্গি' ডেরার হদিশ পাওয়া যায়। বেঙ্গালুরুতে সন্ত্রাস, বাংলায় সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গিদের ঘাঁটি! ধর্মতলা, লেনিন সরণি থেকে খিদিরপুরের পরপর হোটেলে আশ্রয় নিয়েছিল তারা! সন্দেহভাজন জঙ্গিদের একের পর এক ডেরার হদিশ পেল এবিপি আনন্দ। কলকাতা থেকে নিউ দিঘা-জঙ্গিদের ডেরায় এবিপি আনন্দ। ১ মাস ধরে বাংলায় সন্দেহভাজনদের ঘাঁটি, কেউ কিছুই জানতে পারল না! ভুয়ো আধার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করে বাংলায় কীভাবে আশ্রয়? হোটেলে রেজিস্টারের পাতা ছিঁড়ে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা ২ সন্দেহভাজনের, দাবি তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে। রেজিস্টারে ভুয়ো নাম লিখে হোটেলে উঠেছিল মুসাভির ও আব্দুল। এখানেও প্রশ্ন। কী ভাবে ভুয়ো আধার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করল 'জঙ্গিরা'? একের পর এক হোটেলে আশ্রয়ের জন্য যে টাকা লাগত, সেটাই বা কারা যোগান দিত? কাদের সাহায্যে বাংলায় সন্দেহভাজন জঙ্গিদের 'সেফ প্যাসেজ'?এনআইএ-র সন্দেহ, এই বিস্ফোরণের ঘটনায় আইসিস যোগ থাকতে পারে।
বিস্ফোরণে জড়িত সন্দেহে দুজনকে এই রাজ্য থেকে গ্রেফতার করার পর বিষয়টি নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনাও তৈরি হয়েছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যেমন বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গ জঙ্গিদের মুক্তাঞ্চল। রা্ষ্ট্রবিরোধী একটি রাজ্য সরকার এখানে ক্ষমতায় রয়েছে।' অন্য দিকে মুখ্যমন্ত্রীর আবার দাবি, 'বেঙ্গালুরুতে যাঁরা বোমা ফেলেছিল, তাঁরা কর্নাটকের বাসিন্দা। বাংলায় লুকিয়েছিল। ২ ঘণ্টায় ধরে দিয়েছে রাজ্য পুলিশ। বাংলার মানুষ শান্তিতে থাকে, বিজেপির সহ্য হয় না।' তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ আবার নাম না করে কাঁথির এক পরিবারের দিকে আঙুল তোলেন। বলেন, 'কোথা থেকে ধরেছে? কাঁথি' 'সবাই জানে সেখানে কোন পরিবার দুষ্কৃতীদের আনে, আশ্রয় দেয়।' কার উদ্দেশে তাঁর এই আক্রমণ সেটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। রাজনৈতিক তরজার মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের এসপি সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য দাবি করেন, 'এই সংক্রান্ত তথ্য আসার ২ ঘণ্টার মধ্যে অপারেশন করা হয়েছে। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে যৌথ অভিযান চালায় পুলিশ, গ্রেফতার করা হয় ২ সন্দেহভাজন জঙ্গিকে।' কিন্তু তার পরও একটি প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কী করে, ১৩ এবং ১৪ মার্চ খাস মহানগরের হোটেলে থাকতে পারল দুই সন্দেহভাজন জঙ্গি? কী করেই বা গত ২৮ দিন ধরে গোটা রাজ্যের নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে পারল তারা? এতটা সময় গা ঢাকা দিয়ে থাকা সম্ভব হল কী ভাবে? প্রশ্ন তুলছে ওয়াকিবহাল মহল। 


 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


আরও পড়ুন:'সবাই জানে কোন্ পরিবার দুষ্কৃতীদের আনে' নাম না করে অধিকারীদের নিশানা কুণালের?