আবীর দত্ত, অর্ণব মুখোপাধ্যায় ও আবির ইসলাম, রামপুরহাট: রাজমিস্ত্রি থেকে তৃণমূলের (TMC) দাপুটে নেতা। মাটির বাড়ি থেকে অট্টালিকার বাসিন্দা। এলাকায় প্রবল প্রতিপত্তি। ৬ বছরে রকেটের গতিতে উত্থান হয় রামপুরহাট (Rampurhat) এক নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি আনারুল হোসেনের। যাঁকে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নির্দেশে গ্রেফতার করল পুলিশ। 


রকেটের গতিতে আনারুলের উত্থান


রামপুরহাট লাগোয়া সন্ধিপুর এলাকায় প্রাসাদের মতো বাড়ির বাসিন্দা আনারুল। তবে তাঁর এই প্রতিপত্তি বেশিদিনের নয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, আনারুল একটা সময়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। তখন তিনি সপরিবারে থাকতেন মাটির বাড়িতে। তারপর তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। রাজ্যে পালাবদলের পর ২০১১ সাল থেকে হয়ে ওঠেন ঠিকাদার। সেই থেকে আনারুলের উত্থান শুরু। কয়েক বছরের মধ্যেই মাটির বাড়ি হয়ে ওঠে অট্টালিকা।


তৃণমূলের ব্লক সভাপতি হওয়ার পর আনারুলের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি দুটোই বাড়ে। স্থানীয় সূত্রে খবর, বগটুই এলাকায় তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আনারুলই ছিলেন কার্যত শেষ কথা। তাঁর অধীনে ৯টি পঞ্চায়েত এলাকা পড়ে। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে এই ৯টা পঞ্চায়েতে বিরোধীরা কোনও মনোনয়ন দিতে পারেনি বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রে খবর, আনারুল ছিলেন রামপুরহাটের তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ। বছর পাঁচেক আগে থেকে অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে আনারুলের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। 


অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে আনারুলের বিরোধ


বৃহস্পতিবার বগটুই গ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যান অনুব্রত। মুখ্যমন্ত্রী মামলা ভাল করে সাজানোর নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘কেসটা খুব ভালভাবে আটঘাট বেঁধে সাজাতে হবে। কারণ, আমি শুনেছি আগের কেসটা, যেটা মার্ডার হয়েছিল তিন-চার বছর আগে হাইকোর্ট থেকে বেল পেয়ে গিয়েছে।’


তখন পাশে দাঁড়ানো অনুব্রত মুখ্যমন্ত্রীকে সুচপুর গণহত্যার মামলার কথা মনে করিয়ে দেন। সঙ্গে সঙ্গে অনুব্রতর কথার রেশ ধরে পুলিশকর্তাকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সূচপুরে যেমন হয়েছিল, লোকটা এখনও জেলে রয়েছে। সূচপুরের কেসটা দেখে নিন।’


মুখ্যমন্ত্রী ও অনুব্রত বগটুই গ্রাম ছাড়ার কিছুক্ষণ বাদে গ্রেফতার হন তৃণমূলের দাপুটে নেতা আনারুল। পুলিশ তাঁর প্রাসাদোপম বাড়িতে পৌঁছনোর পরই তৃণমূলের বীরভূমের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেন আনারুলের ভাইপো। তাঁর দাবি, অনুব্রতর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ বলেই মিথ্যা মামলায় আনারুলকে ফাঁসানো হচ্ছে। এ বিষয়ে অনুব্রত কোনও মন্তব্য করতে চাননি।