সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি: রথযাত্রা উৎসবের ঠিক আগে নবযৌবন বা নবকলেবর উৎসব। মাহেশের জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার উৎসবের প্রাক্কালে এই উৎসব হয়। বিশেষত্ব কী? এই দিনই একমাত্র জগন্নাথ দেবের হাত দেখা যায় মহেশের মন্দিরে। নবযৌবন উপলক্ষে জগন্নাথ দেবকে পড়ানো হয় রুপোর হাত। একেবারে রাজ বেশে সাজানো হয় জগন্নাথ দেবকে।


পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন প্রজাপতি ব্রক্ষ্মার আদেশে শুরু করেন বিষ্ণুর এক অনন্য রূপের আরাধনা। কিন্তু বিষ্ণুর এই রূপ কেমন হবে তা নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন বলে কথিত রয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে বহু কারিগর নিয়ে আসার পরেও নিম কাঠ থেকে ভগবানের রূপ বানাতে পারছিলেন না কেউ। কথিত হয়েছে, তখন স্বর্গ থেকে স্বয়ং ভগবান বিশ্বকর্মা রাজার কাছে আসেন এক কারিগরের বেশে। রাজার সাথে বিশ্বকর্মার শর্ত হয়েছিল এই যে তিনি যতদিন ওই মূর্তি গড়বেন ততদিন যেন রাজা মূর্তি গড়ার ঘরের দরজা না খোলেন। বিশ্বকর্মার শর্তে রাজা রাজি হওয়ার পরে কারিগরবেশী বিশ্বকর্মা শুরু করেন মূর্তি নির্মাণের কাজ। বন্ধ ঘরে কাজ করতে থাকেন বিশ্বকর্মা। ঘরের বাইরে থেকে উদগ্রীব হয়ে পড়েছিলেন রাজা। কীভাবে মূর্তি তৈরি হচ্ছে তা দেখার জন্য তর সইছিল না আর তাঁর। বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করার পরে ধৈর্য না ধরে রাখতে পেরে তিনি খুলে দেন মূর্তি তৈরি ঘরের দরজা। রাজা শর্ত না মানায় বিশ্বকর্মা তাঁর কাজ সম্পন্ন খাওয়ার আগেই সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে যান। রাজা ঘরে ঢুকে দেখেন বিষ্ণুর সেই রূপের বাকি সবকিছু তৈরি হলেও বাকি থেকে যায় হাত। তারপর থেকেই জগন্নাথ দেবের হাত ছাড়াই মূর্তি পুজো হয় সব জায়গায়।


মহাপ্রভুর নবযৌবন উৎসবের দিনই একমাত্র, যেখানে মাহেশের জগন্নাথ দেবকে পড়ানো হয় রুপোর হাত। স্নানযাত্রা উৎসবের পর জগন্নাথ দেবের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। তাই জগন্নাথ দেবকে একদম একান্তে মন্দিরের গর্ভগৃহে ১৫ দিনের জন্য নিভৃতবাসে রাখা হয়। এই ১৫ দিন মন্দিরের সমস্ত দরজা বন্ধ থাকে এমনকি ভক্তদের নামকীর্তন বন্ধ থাকে ওই সময়। ১৫ দিন বাদে জগন্নাথ দেব সুস্থ হয়ে উঠলে সেই দিনটিকে পালন করা হয় নবযৌবন উৎসব রূপে। এদিন মহাপ্রভু জন্য ৫৬ রকম ভোগ নিবেদন করা হয়। একইসঙ্গে এই দিনে জগন্নাথ বলরাম এবং সুভদ্রা তিনজন কে হাত ও অলঙ্কার পরিয়ে নতুন রূপে রাজ বেশে সাজানো হয়। 


আরও পড়ুন: রথে জগন্নাথদেবের জন্য রাজসিক আয়োজন, প্রস্তুত হয় ৫৬ ভোগ, কী কী পদ ?


কথিত রয়েছে, জগন্নাথ দেব এই দিন জ্বর থেকে সেরে উঠে মহানন্দে থাকেন। দীর্ঘ ১৫ দিন মন্দিরের মধ্যে নিভৃত বাসায় থাকার পর আজই প্রথম মহাপ্রভুকে দর্শন জন্য মন্দিরের দরজা খোলা হয়। এই নবযৌবন উৎসবের এক বিশেষ মাহাত্ম্য হলো জগন্নাথ দেবের হাত। ভক্তদের বিশ্বাস এই দিন জগন্নাথ দেব রাজ বেশে থেকে সমস্ত ভক্তদের দুহাত ভরে আশীর্বাদ করেন।