প্রকাশ সিনহা, কলকাতা: কীভাবে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা তুলেছিলেন কুন্তল ঘোষ (Kuntal Ghosh) ও তাপস মণ্ডল (Tapas Mandal) ? এনিয়ে বিস্ফোরক দাবি করা হয়েছে CBI-এর চার্জশিটে। মামলা করে, ১ নম্বরের পরিবর্তে ৬ নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে, টাকা তোলা হয়েছিল বলে CBI-এর চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে।


CBI-এর মামলায় আদালতের নির্দেশে গ্রেফতার হয়েছেন ৪ অযোগ্য শিক্ষক। তবে শুধু টাকা দিয়ে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়াই নয়, স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায়, টাকা দিয়েও, চাকরি না পাওয়ার ভুরি ভুরি অভিযোগও ইতিমধ্য়েই সামনে এসেছে।


এর আগেই প্রতারিত চাকরিপ্রার্থীর (Teacher recruitment scam) সঙ্গে কথা বলেছিল এবিপি আনন্দ। বলাগড়ে প্রতারিত চাকরিপ্রার্থী পিয়ালি চৌধুরী বলেছিলেন, 'কলকাতার অফিসে টাকা । বাড়িতেও দেওয়া হয়েছিল, ঠিক জানি না। বাবা গিয়ে দিয়ে এসেছিল। পুরো ৬ লক্ষ টাকা।' অভিযোগকারী ও চাকরিপ্রার্থীর বাবা শম্ভু লাহা বলেন, 'ছেলের চাকরির জন্য ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম, কলকাতায় গিয়ে টাকা পৌঁছে দিয়েছিলাম। কুন্তলের হয়ে এক জন যোগাযোগ করিয়েছিল, ছেলের চাকরি শেষ পর্যন্ত হয়নি।' কিন্তু, এই চক্র কীভাবে কাজ করত? CBI-এর চার্জশিটে এনিয়ে বিস্ফোরক দাবি করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, মামলা করে, ১ নম্বরের পরিবর্তে ৬ নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে, ধৃত কুন্তল ঘোষ ও তাপস মণ্ডল কোটি কোটি টাকা তুলেছেন।


২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের একটি বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ভুল প্রশ্নের জন্য সব পরীক্ষার্থীকে ১ নম্বর করে দেওয়া হবে এবং যাঁরা যোগ্যতা অর্জন করবেন, তাঁদের ইন্টারভিউতে ডাকা হবে। CBI-এর চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে এই ১ নম্বর বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আসার পরই প্রতারণার ফাঁদ পাতেন কুন্তল-তাপসরা। চার্জশিটে দাবি, ১ নম্বর নয়, আদালতে মামলা করে ৬ নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হবে বলে টাকা তুলতে শুরু করেন কুন্তল ঘোষ এবং তাপস মণ্ডলরা। এরপরই, এই ভুয়ো ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়। CBI-এর চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, এই ওয়েবসাইটে একটি ভুয়ো মেরিট লিস্ট বের করা হয়। তাতে, অযোগ্য চাকরিপ্রার্থী যাঁদের থেকে টাকা নেওয়া হয়েছিল, তাঁদের দেখানো হয় যোগ্য বলে। শুধু তাই নয়, চাকরিপ্রার্থীদের আস্থা অর্জন করতে এবং টাকা তুলতে চেষ্টার কোনও কসুর করেননি কুন্তল-তাপসরা। এর জন্য দুটো মেল-আইডি তৈরি করা হয়। প্রথম মেল থেকে ভুয়ো রেজাল্ট চাকরিপ্রার্থীদের কাছে পাঠানো হয়। যার নীচে লেখা ছিল, ডু-নট রিপ্লাই। এরপর, দ্বিতীয় মেল থেকে কলকাতা প্রাইমারি স্কুল কাউন্সিল বা KPSC-র অফিসে তাঁদের কাউন্সেলিংয়ের জন্য ডাকা হয়।


CBI-এর চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে যে, KPSC-র অফিসে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন, কয়েকজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি। আস্থা আর্জন করতে তাঁরা, ওই সব চাকরি প্রার্থীদের নথি যাচাই করার পাশাপাশি, তাঁদের বিভিন্ন নথিতে সই করিয়ে নেয়। কিন্তু, কোনও কাউন্সেলিং বা ইন্টারভিউ হয়নি। কলকাতা প্রাইমারি স্কুল কাউন্সিল বা KPSC-র চেয়ারম্যান কার্তিক চন্দ্র মান্নার বয়ানের সঙ্গেও এই বিষয়টি মিলিয়ে দেখা হয়েছে। CBI-এর চার্জশিটে আরও বলা হয়েছে, চাকরি বিক্রি করে ৭১ জনের কাছ থেকে মোট ৩ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ। ধৃত কুন্তল ঘোষের আইনজীবী মেহেদি হাসান বলেন, 'সিবিআই চার্জশিটে বলেছে। আমরা ট্রায়ালে বুঝে নেব।'


আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন নিয়ে ভাঙড়ে ১৪৪ ধারা জারি! কড়া নিরাপত্তা