প্রকাশ সিনহা, কলকাতা : জামিন পেয়ে গেলেন নিয়োগ দুর্নীতি মামলার ( Recruitment Scam ) মিডলম্যান প্রসন্নকুমার রায় (Prasanna Kumar Roy )। সুপ্রিম কোর্ট ( Supreme Court ) থেকে জামিন পেলেন তিনি।  SSC’র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা ও প্রাক্তন সচিব অশোক সাহা গ্রেফতারের পর একে একে CBI-এর জালে ধরা পড়েন প্রদীপ সিংহ এবং প্রসন্নকুমার রায়। এদিন প্রসন্নকুমার রায়ের হয়ে আদালতে সওয়াল করেন মুকুল রোহতগি। নিয়োগ দুর্নীতিতে টাকাপয়সা লেনদেন হয়েছিল প্রসন্নকুমার রায়ের মাধ্যমে, দাবি করেছিল সিবিআই। 


আর প্রসন্নর গ্রেফতারি নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়ল সিবিআই। আদালতের পর্যবেক্ষণ, 'অভিযুক্ত মিডলম্যান হিসাবে গ্রেফতার করা হয় প্রসন্নক। অভিযোগ, অন্যের হয়ে টাকা তুলতেন প্রসন্ন। কিন্তু যাঁদের হয়ে টাকা তুলতেন প্রসন্ন, তাঁদের ছোঁয়নি সিবিআই।' জামিনের বিরোধিতায় সিবিআই আদালতে সওয়াল করেন, 'এটা বিরাট দুর্নীতি, টাকা তোলার জন্য মিডলম্যান হিসাবে কাজ করতেন প্রসন্ন'। তাতে আদালতের মন্তব্য, 'আপনারা এখনও রাঘববোয়ালদের ছুঁয়ে দেখেননি। সব বড় মাথাকে কি আপনারা গ্রেফতার করেছেন?  যাঁরা মিডলম্যানের থেকে টাকা নিলেন তাঁরা এখনও মুক্ত, আর যিনি টাকা তুললেন তিনি জেলে? প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের । 


তাতে সিবিআইয়ের সওয়াল, 'আমরা কিছু সরকারি কর্মীকে গ্রেফতার করেছি। কিন্তু রাজ্য সরকারের অনুমতি না মেলায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা এগনো যাচ্ছে না। এ জন্য মামলা ও তদন্তে দেরি হচ্ছে', সওয়াল সিবিআইয়ের
'আপনারা অনুমতির জন্য কতদিন অপেক্ষা করবেন? যতদিন না অনুমতি পাবেন ততদিন কি জেলে থাকবেন প্রসন্ন?' প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের


সিবিআই (CBI )সূত্রে দাবি ছিল, SSC-র নিয়োগে এই দু’জন মিডলম্যান হিসেবে কাজ করতেন। প্রদীপ সিংহের মতো প্রসন্নর বিরুদ্ধেও অযোগ্য প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়োগ-কর্তাদের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রসন্নর অফিস থেকে নিয়োগ সংক্রান্ত বেশ কিছু নথিও মেলে বলে সিবিআই সূত্রে দাবি করা হয়েছিল। ২০২২ সালের অগাস্ট মাসে এই প্রসন্ন ধরা পড়েন। 


সিবিআই সূত্রে দাবি, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় উপেন বিশ্বাস বর্ণিত সৎ রঞ্জন ওরফে চন্দন মণ্ডল-সহ একাধিক এজেন্ট চাকরি বিক্রির টাকা পৌঁছে দিতেন সিবিআইয়ের হাতে ধৃত প্রসন্ন রায়ের কাছে। প্রসন্নর স্ত্রীর অ্যাকাউন্টেও টাকা ঢুকেছে চন্দন মণ্ডলের অ্যাকাউন্ট থেকে।  কোনও কোনও চাকরিপ্রার্থী আবার সরাসরি প্রসন্নর অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়েছেন বলেও সিবিআইয়ের দাবি। 


CBI এর দাবি, নিয়োগ মামলায় ধৃত মিডলম্যান প্রসন্ন রায় ও আত্মীয়দের ৪৬৩টি সম্পত্তির হদিশ পায় তারা।  কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সন্দেহ, পুরোটাই কেনা হয়েছিল নিয়োগ দুর্নীতির টাকায়! কী ছিল না এই প্রসন্নর ? রকেটের থেকেও দ্রুত গতিতে উত্থান ছিল এই অভিযুক্ত মিডলম্যানের। ৮ বছরে ৪৬৩টি সম্পত্তি হয়েছিল তার নামে!


প্রসন্ন সম্পর্কে সিবিআইয়ের দাবি, ২০১৪ সাল থেকে ধৃত শান্তিপ্রসাদ সিন্হার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এই প্রসন্নকুমার রায়ের। প্রসন্ন’র সল্টলেকের অফিসে অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি হত। সেই তালিকা ইমেল করে পাঠানো হত SSC’র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিন্হাকে। এই অফিসেই অযোগ্য প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠকও হত। ধৃত প্রসন্ন রায়  চাকরিপ্রার্থীদের থেকে সরাসরি টাকা নিয়েছেন বলেও দাবি করেছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সূত্রে দাবি করা হয়েছে, এই প্রসন্ন রায়ের মাধ্যমেই চাকরি বিক্রির টাকা পৌঁছে যেত প্রভাবশালীদের হাতে। 


আরও পড়ুন :