কলকাতা: মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক হলেও, এখনও কাজে ফেরেননি জুনিয়র ডাক্তাররা। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে সেই নিয়ে আলোচনা চলাকালীন উঠল নিরাপত্তার বিষয়টিও। জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনে অভিযুক্ত, সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের কথাও উল্লেখ করলেন তিনি। হাসপাতালে প্রশিক্ষিত পুলিশকর্মী নিয়োগের দাবি জানালেন তিনি। (RGKarCase)


সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরও এখনও জুনিয়র ডাক্তাররা যে কাজে ফেরেননি, এদিন আদালতের আলোচনায় উঠে আসে বিষয়টি। এতে ইন্দিরা জানান, কর্মবিরতি নিয়ে রাজ্য সরকার যে দাবি করছে, তা বিভ্রান্তিকর। সিনিয়র ডাক্তাররা অতিরিক্ত সময় কাজ করে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতিতে রোগীমূত্য নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে রাজ্য যে তথ্য দিচ্ছে, তাও অসত্য বলে জানান তিনি। (Supreme Court)


এই জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার নিয়ে নিরাপত্তার প্রশ্ন তোলেন সিনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী। তিনি জানান, বেসরকার সংস্থার ১ হাজার ৫১৪ নিরাপত্তারক্ষী হাসপাতালগুলিতে মোতায়েন রয়েছেন, যা নিয়ে আপত্তিজনক। এদের জায়গায় পুলিশকর্মী নিয়োগ করা হোক বলে দাবি করেন ইন্দিরাও। জুনিয়র ডাক্তাররাও কাজে ফিরতে চান বলে জানান তিনি। 


চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের নিয়োগ করলে, ডাক্তার, বিশেষত মহিলা ডাক্তাররা কীভাবে নিজেদের সুরক্ষিত মনে করবেন, প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ও। তিনি বলেন, "এই অপরাধ চুক্তিভিত্তিক কর্মী দ্বারা সংগঠিত হয়েছে। পুলিশ বারাক থাকা সত্ত্বেও ঢুকে পড়ে অভিযুক্ত। এখন আবার চুক্তিভিত্তিক কর্মী ৭ দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়োগ করা হচ্ছে। তারা গোটা হাসপাতালে কাজ করবে। চিকিৎসক, বিশেষত মহিলা চিকিৎসকরা কীভাবে নিজেদের নিরাপদ মনে করবেন? প্রশ্ন প্রধান বিচারপতি কর্মশক্তির বড় অংশই তরুণী। তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকে ডাক্তারদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।"


ডাক্তারদের সংশয় ন্যায়সঙ্গত বলেও মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর বক্তব্য, "ডাক্তারদের সংশয় তো ন্যায়সঙ্গত যে এই চুক্তিভিত্তিক কর্মী কারা? নিরাপত্তা বাড়ানোর যে নির্দেশ আমরা দিয়েছিলাম, সেটির কী হল? বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা ছাড়া, আর কী পদক্ষেপ করা হয়েছে? পুরুষ চিকিৎসকরা যতক্ষণ কাজ করবেন মহিলারাও সেই সময় সীমা মেনে কাজ করতে পারেন। আপনি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার কথা বলতে পারেন।"


এর পাল্টা রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিবল জানান, একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে রাজ্য। হাসপাতালে পুলিশ, সিআরপিএফ মোতায়েন রয়েছে এই মুহূর্তে। এর পাশাপাশি, রাজ্য আরও পদক্ষেপ করছে। আগামী সাত থেকে ১৪ দিনের মধ্যে হাসপাতালে বিশ্রামাগার এবং শৌচাগার তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।  সিবল আরও জানান, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর জুনিয়ার ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন তারা কাজে ফেরত যাবেন, এখনও যাননি। 


জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে ফেরার কথা জানিয়েছেন বলে আদালতে মন্তব্য করেন ইন্দিরা। নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, "আর জি করের পরিকাঠামো এবং নিরাপত্তা উন্নত করার কাজ ধীর গতিতে হচ্ছে।" এর পাল্টা কপিল বলেন, "আমরা সবটা ১৪ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ করে ফেলব। এই ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে সেটা আমরা সুনিশ্চিত করছি। "