কলকাতা : সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর, রাতে ধর্মতলার মঞ্চ থেকে অনশন প্রত্যাহারের কথা  ঘোষণা করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা । ১৭ দিন পর অনশন প্রত্যাহার হয়। যদিও আন্দোলনকারীরা পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, সরকারের কথায় নয়, তিলোত্তমার মা-বাবার অনুরোধেই এই অনশন প্রত্যাহার।  যদিও তাঁরা জানিয়ে দিলেন,  তিলোত্তমার ন্যায়বিচার-সহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন চলবে। আগামী শনিবার,আর জি কর মেডিক্যালে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন তাঁরা।  


মঙ্গলবার জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের অন্যতম মুখ আসফাকুল্লা নাইয়ার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টেও দেখা গেল সেই কথারই অনুরণন। তিনি আবারও জানালেন, বিশ্বাস রাখুন যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। এ যুদ্ধ শেষ হয়না। 


সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে জুনিয়র ডাক্তাররা যে দাবিগুলি নিয়ে সরব হয়েছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম ছিল বিভিন্ন কমিটিতে স্টুডেন্টদের প্রতিনিধিত্ব রাখা ও থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। এই দুটি বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে একটা সময় প্রায় কথার লড়াই লেগে যায় মুখ্যমন্ত্রী ও জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে। কেন এই দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন আসফাকুল্লা। 


তিনি জানালেন, আন্দোলনকারী ডাক্তারদের অনেকেই ডিসেম্বরে পরীক্ষা দেওয়ার পর পাশ করে যাবে।  জুনিয়র ডাক্তার থেকে সিনিয়র ডাক্তার হয়ে যাবে । এঁদের কেউ স্টুডেন্ট তখন ইলেকশনে দাঁড়াবেন  না। তাহলে যুদ্ধ কাদের জন্য ? আসফাকুল্লার কথায় 'ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ,আমার আপনার বাড়ির ছেলে মেয়েরা মেডিক্যাল কলেজে পড়তে এসে সুষ্ঠ পরিবেশ পাবে । ডেমোক্রেসির স্বাদ পাবে । এতদিন সিলেক্ট করে অধিক ক্ষমতা দিয়ে ছাত্র থেকে গুন্ডা বানানোর প্রক্রিয়া বন্ধ হবে । ছেলে মেয়েরা নিজেদের সমস্যা বলার জায়গা পাবে । অন্যায় করলে দ্রুত শাস্তি পাবে ।'  


আর জি কর মেডিক্য়ালে চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের পর যে বিষয়টি আলোচনা ও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে, তা হল
থ্রেট কালচার বা হুমকি সংস্কৃতি। যার বিরুদ্ধে বারবার গর্জে উঠেছেন ডাক্তারি পড়ুয়ারা। একের পর এক সরকারি মেডিক্য়াল কলেজ থেকে আসতে শুরু করে এই অভিযোগ। ভাইরাল হয়েছে হুমকি-শাসানির একাধিক অডিও ক্লিপ। সোমবার, নবান্ন সভাগৃহে, মুখ্য়মন্ত্রীর সামনে সেই থ্রেট কালচারেরই একের পর এক দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তা নিয়ে জুনিয়র ডাক্তার ও সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে মতানৈক্যও স্পষ্ট হয়। এই নিয়ে ডা. আসফাকুল্লা লিখেছেন, 'Threat culture নিয়ে বেশি বলার নেই। কে কাকে থ্রেট দিচ্ছে বোঝাই মুশকিল । তবে সর্বস্তর এর থ্রেট বন্ধ হোক ।' 


এছাড়াও ডা.আসফাকুল্লা লেখেন, ' সেন্ট্রাল রেফারেল সিস্টেম এবং বেড ভ্যাকেন্সি মনিটরিং চালু ব্যাপক ভাবে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন । দালাল চক্রের অবসান হবে । এই নিয়ে বেশি আলোচনা হয়নি কারণ technical ব্যাপার । সরকার দেখুক। আমরা সাজেশন দিতে থাকবো ।'


সবশেষে তিনি আবারও মনে করালেন, 'সর্বোপরি আমার বোনের বিচার। এখনও প্রক্রিয়া শেষ হয়নি । কাউকে ছেড়ে দেওয়ার জায়গা নেই ,কেউ ছাড় পাবেনা । প্রত্যেকটা কোর্ট রুমে আইনজীবীরা  ফাইট করছেন । রাস্তায় আমরা ফাইট করবো । বাড়িতে ,গাড়িতে ,হাটে,বাজারে বিচার আমরা চাইতে থাকব । চাইতে চাইতে একদিন ছিনিয়ে আনবো ।শুধু সময়ের অপেক্ষা ....বিশ্বাস রাখুন যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। এ যুদ্ধ শেষ হয়না ...।' 


আরও পড়ুন:


এবার অমিত শাহকে চিঠি নিহত চিকিৎসকের বাবার, কী লিখলেন?