পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে সারা রাজ্যজুড়ে আন্দোলন চলছে। তার মধ্যেই সেই আন্দোলনকে নিশানা করে শাসকদলের একের পর এক নেতার মন্তব্যে শুরু হয়েছে বিতর্ক। আগে কোচবিহারের উদয়ন গুহ। এবার বাঁকুড়ার অরূপ চক্রবর্তী। মুখ্যমন্ত্রীর গায়ে কালি লাগানোর চেষ্টা করলে হাত মুচড়ে দেওয়ার নিদান দিলেন বাঁকুড়ার সাংসদ। একই সঙ্গে ডাক্তারদের প্রতিও তোপ দেগেছেন সাংসদ। কার্যত হুঁশিয়ারির সুর শোনা গিয়েছে তাঁর গলায়। বাদ যায়নি পুলিশও, বিরোধীদের মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলে সাংসদকে হুঁশিয়ারি দিতে দেখা গেল পুলিশের একাংশকেও।  


আরজি কর কাণ্ডে দোষীদের শাস্তির দাবিতে গত ১০ দিন ধরে লাগাতার কর্মবিরতি ও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়ার চিকিৎসকরা। ঘটনায় বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে বিরোধী দল ও গণসংগঠনগুলি। সাধারণ মানুষের আন্দোলনে উত্তাল রাজ্য। সারা দেশে, বিদেশেও অনেক জায়গায় এই ঘটনার বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে। রাজ্যের ক্ষেত্রে বিরোধীদের আন্দোলনে অভিযোগের তির তৃণমূল সরকারের দিকেই। মমতার পদত্যাগ চেয়ে রাস্তায় নেমেছেন বিরোধীরা। এই পরিস্থিতি দোষীর ফাঁসির দাবি তুলে রাস্তায় নেমেছে তৃণমূলও। ব্লকে ব্লকে মিছিলের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। দলীয় নির্দেশে শনিবার সন্ধ্যায় বাঁকুড়ার হিন্দু হাইস্কুল ময়দান থেকে মাচানতলা পর্যন্ত মূলত মহিলাদের নিয়ে মিছিল করে তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা নেতৃত্ব। মিছিল শেষে মাচানতলায় আকাশ মুক্তমঞ্চ থেকে বিরোধীদের আন্দোলনকে তুলোধোনা করেন বাঁকুড়ার সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী। আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদেরও সতর্ক করেন বাঁকুড়ার তৃণমূল সাংসদ। পরোক্ষে বিরোধীদের মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলে পুলিশের একাংশকেও একহাত নিতে দেখা যায় তাঁকে। গতকালের সভামঞ্চ থেকে সাংসদ বলেন, 'মনিপুরে যখন মহিলাদের উপর অত্যাচার হয় তখন সিপিএম কোথায় ছিল? আজ মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে নাইট শোর সিনেমা দেখার মতো করে মহিলাদের রাস্তায় নামানো হচ্ছে। এভাবে মুখ্যমন্ত্রীর গায়ে কালি লাগানোর চেষ্টা হলে তৃণমূল কর্মীরা আপনাদের হাত মুচড়ে দেবে।'


বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে আন্দোলনকারী জুনিয়ার চিকিৎসকদের সতর্ক করে সাংসদ বলেন, 'কর্মবিরতির নামে অনেক জুনিয়ার চিকিৎসক বেড়াতে যাচ্ছেন। অনেকে বাড়ি যাচ্ছেন। আপনারা ডাক্তারি করতে এসেছেন রাজনীতি করতে নয়। তাই আপনারা পরিষেবা স্বাভাবিক রাখুন। হাসপাতালে রোগী মারা যেতে শুরু করলে গ্রামগঞ্জ থেকে দলে দলে লোক হাসপাতালে ছুটে আসবে। জনরোষ তৈরি হবে। তখন আমরা সামলাতে পারবো না।' অবরোধের নামে 


গতকালের সভামঞ্চ থেকে পুলিশের একাংশকেও হুঁশিয়ারি দেন সাংসদ। তাঁর বক্তব্য, 'পুলিশের একাংশ সাপের মুখে চুমু খাচ্ছেন আবার ব্যাঙের মুখেও চুমু খাচ্ছেন। মিটিং মিছিল করতে দিয়ে বিরোধীদের মদত দিচ্ছেন। আমাদের কর্মীরা সব নজর রাখছে। মনে রাখবেন আপনাদের রাজ্য সরকারের অধীনে কাজ করতে হবে।'  


সাংসদ অরূপ চক্রবর্তীর এই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে সিপিএম। সিপিএম নেতৃত্বের দাবি তৃণমূল সাংসদের কাছে এর বেশি কিছু আশা করা যায় না। সিপিএম-এর রাজ্য কমিটির সদস্য অভয় মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, 'সাধারণ মানুষের আন্দোলনের মুখে পড়ে এখন শুধু বিরোধীদের নয় আন্দোলনকারী চিকিৎসক, পুলিশ সহ সকলকেই শত্রু মনে করছে তৃণমূল।'


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


আরও পড়ুন: RG কর কাণ্ডের মাঝেই মালদায় হাসপাতালে আক্রান্ত ডাক্তার-নার্স, গ্রেফতার TMC নেতা