হিন্দোল দে, সুকান্ত মুখোপাধ্যায় ও অতসী মুখোপাধ্যায়, কলকাতা : 'নারকো অ্যানালিসিস টেস্ট' দিতে অস্বীকার করায়, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের 'নারকো টেস্ট' করার CBI-এর আবেদন খারিজ করে দিল শিয়ালদা আদালত। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, সঞ্জয় 'নারকো টেস্টে' রাজি না হওয়ায় কি CBI তদন্ত ধাক্কা খেল? নাকি, 'নারকো টেস্টে' রাজি না হওয়ায় সঞ্জয়ের সমস্য়া আরও বাড়বে?
এর আগে, গত ২৫ অগাস্ট, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয়ের পলিগ্রাফ টেস্ট হয়েছিল। কিন্তু, সূত্রের দাবি, তার রিপোর্টে ধোঁয়াশা থাকায় সঞ্জয়ের নারকো টেস্ট করানোর সিদ্ধান্ত নেয় CBI।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা কর্তা গদাধর চট্টোপাধ্যায় জানালেন, মানুষের মনে দুটি স্তর থাকে, সচেতন মন, অবচেতন মন। যখন মানুষ সচেতন থাকে, তখন সে চাইলে অনেক কিছুই লুকিয়ে যেতে পারে। কিন্তু সেটা অবচেতন মনে থেকে যায়। নারকো-টেস্ট করালে সেটা গোপন রাখা যায় না। এক্ষেত্রে ৭ টা ওষুধ ইনজেক্ট করা হয়, যার ফলে সচেতন মন কাজ করে না, বরং প্রকাশ ঘটে অবচেতন মনের। সেই অবস্থায় তাকে প্রশ্ন করা হয় ও উত্তর রেকর্ড করা হয়।
লিগাল টিমের সঙ্গে কথা বলে বৃহস্পতিবার শিয়ালদা আদালতে সঞ্জয় রায়ের নারকো টেস্ট করার আবেদন করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। সেই মতো শুক্রবার সঞ্জয়কে আদালতে হাজির করানো হয়। কিন্তু 'নারকো অ্যানালিসিস টেস্ট' দিতে অস্বীকার করে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার। এরপর, ২০১০ সালে, কর্ণাটকের একটি মামলার কথা উল্লেখ করে বিচারক বলেন, যাঁর নারকো অ্যানালিসিস টেস্ট করা হবে, তাঁর সম্মতি ছাড়া এটা করা শুধু অসাংবিধানিকই নয়, এটা তাঁর মানবাধিকার লঙ্ঘন। যেহেতু সঞ্জয় রায় সম্মতি দেননি, তাই CBI-এর আবেদন খারিজ করা হল।
এখানেই প্রশ্ন উঠছে যে, সঞ্জয়ের যদি কিছু লুকনোর নাই থাকে, তাহলে নারকো অ্যানালিসিস টেস্টে সে আপত্তি করল কেন? আইনজীবী সায়ন দে প্রশ্ন বললেন, এক্ষেত্রে অভিযুক্তের একটা অধিকার থাকে, যাকে বলে রাইট এগেইনস্ট সেলফ ইনক্রিমিনেশন । তার বলে সে নারকো -টেস্টে সম্মত নাও হতে পারে।
আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল জানালেন, এই যে নারকো টেস্ট সে করতে দিল না...হতে পারে একাঝিক অভিযুক্ত ছিল...বা আরও কোনও বিষয় ছিল, যা ধামাচাপা দিতেই অভিযুক্ত নারকো টেস্ট আইনের ফাঁক দিয়ে এড়িয়ে গেল।
26/11 মুম্বই হামলায় ধৃত আজমল কসাবে নারকো টেস্ট করা হয়েছিল। পাকিস্তান কীভাবে গোটা মুম্বই হামলার সঙ্গে জড়িত, তা স্পষ্ট হয়ে গেছিল নারকো টেস্টের সময় কসাবের কথা থেকে কীভাব পাকিস্তানি সেনা এবং জঙ্গিগোষ্ঠীগুলি মিথ্যা প্রচার ও মগজধোলাইয়ের মধ্য়ে দিয়ে তরুণদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িয়ে দেয় তা স্পষ্ট হয়ে গেছিল এই নারকো টেস্টে কসাবের বয়ান থেকে। এদিকে, আর জি কর মেডিক্য়ালে খুন ও ধর্ষণ মামলায় শুক্রবার ফের সিবিআইয়ের একটি দল আসে আর জি কর মেডিক্যালে। প্ল্যাটিনাম জুবিলি বিল্ডিংয়ে যায় তারা।
তদন্তের জন্য হাসপাতালে আনা হয়, নিহত তরুণী চিকিৎসকের মা-বাবা ও কাকিমাকে প্রায় এক ঘণ্টা আর জি কর হাসপাতালে ছিলেন CBI-এর তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন :