অর্ণব মুখোপাধ্য়ায়, কলকাতা: আরজি কর মেডিক্যালে নারকীয় কাণ্ডে আন্দোলন চলছে রাজ্যজুড়ে। একাধিক অভিযোগে বিদ্ধ আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। ডাক্তার ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় সিবিআই জেরার মুখে তিনি। আরজি করের অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফার পরেই তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে বসানো হয়েছিল, যদিও তিনি যোগ দিতে পারেননি সেই পদে। তা নিয়ে প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন পড়ুয়া ও সাধারণ মানুষ। অবশেষে সন্দীপ ঘোষকে ন্যাশনাল মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল, খারিজ করা হল তাঁর বদলি সংক্রান্ত সরকারি বিজ্ঞপ্তি।


আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য। ওই ঘটনার সময় আরজি করে অধ্যক্ষ ছিলেন সন্দীপ ঘোষ। প্রবল পড়ুয়া-আন্দোলনের চাপে শেষ পর্যন্ত আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দেন সন্দীপ ঘোষ। তার পরেই তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করেছিল রাজ্য প্রশাসন। রাজ্যের সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন পড়ুয়ারা। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়ারা অধ্যক্ষের ঘর তালা বন্ধ করে রাজ্যের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। এই আবহেই হাইকোর্টে যায় আরজি কর সংক্রান্ত মামলা। হাইকোর্টের তরফে বলা হয়েছিল এখন যদি সন্দীপ ঘোষ ছুটিতে না যান তাহলে হাইকোর্ট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তারপরে সেই সন্ধেতেই ছুটিতে যাওয়ার দরখাস্ত দেন সন্দীপ ঘোষ। এই আবহেই সিবিআইয়ের হাতেও ততক্ষণে মামলা চলে গিয়েছে। তারপর থেকে টানা প্রতিদিন সন্দীপ ঘোষকে ডেকে জেরা করেছে সিবিআই। অন্যদিকে পড়ুয়াদের দাবি ছিল, সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে যেহেতু একাধিক অভিযোগ উঠেছে সেই কারণেই তাঁকে কোথাও উচ্চপদে দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। এর সঙ্গেই সন্দীপ ঘোষ ইস্তফা দেওয়ার পরে আরজি কর হাসপাতালে যে নতুন অধ্যক্ষ এসেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধেও কিছু অভিযোগ ছিল পড়ুয়াদের। পাশাপাশি আরজি করের আরও কিছু উচ্চপদস্থ অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল পড়ুয়াদের। সেই সব দাবি নিয়েই বুধবার স্বাস্থ্য ভবন অভিযান করেন ডাক্তারি পড়ুয়ারা। স্বাস্থ্যভবনে শীর্ষকর্তাদের কাছে দাবি জানিয়ে আসা হয়। তারপরে এদিনই রাতে স্বাস্থ্যভবনের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় পড়ুয়াদের সব দাবি মেনে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে আরজি করের নবনিযুক্ত প্রিন্সিপাল-সহ ৪ আধিকারিককে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম জানিয়েছেন, পড়ুয়াদের দাবি মেনে সন্দীপ ঘোষকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে, সেটাও তুলে নেওয়া হল। 


আরজি করে এক আন্দোলনরত চিকিৎসক বলেন, 'আমাদের দীর্ঘ আন্দোলনের পথে এই দাবি আদায় করতে পেরেছি। এখনও মূল দাবি, অর্থাৎ বিচারের দাবি, যারা অপরাধী তাদের ধরার ও বিচারের দাবি পূরণ হয়নি এখনও। এগুলো আংশিক দাবি ছিল।'


স্বাস্থ্যসচিব জানিয়েছেন যাতে স্বাভাবিক অবস্থায় হাসপাতাল ফিরে আসে তার জন্য আবেদন করেছেন। আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন,  ভাইরাল পোস্টমর্টেম রিপোর্টে যে আঘাতের বিবরণ রয়েছে, তাতে সন্দেহ জাগায় যে একাধিক ব্যক্তি এর সঙ্গে জড়িত। তাদের গ্রেফতার করা হোক। এখনও পর্যন্ত মাত্র একজন গ্রেফতার হয়েছে। এই অবস্থায় কাজে যোগ দিলে ডাক্তারি পড়ুয়াদের সুরক্ষা, রোগীর সুরক্ষা, মহিলা চিকিৎসক-নার্সের ব্যক্তিগত সুরক্ষা ব্যহত হতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন। তাঁদের স্পষ্ট দাবি, বিচারের প্রক্রিয়া কিছুদূর যতদিন না এগোচ্ছে, বিচারের রূপরেখা যতদিন না মোটামুটি স্পষ্ট হচ্ছে, ততদিন আন্দোলন থেকে সরে আসার ভাবনা নেই।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে। 


আরও পড়ুন: বোনাস বাড়ল সিভিক ভলান্টিয়ারদের, কত টাকা বাড়াল রাজ্য?