কলকাতা: RG কর মেডিক্য়াল কলেজের ভিতরেমহিলা চিকিৎসকের খুনের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা রাজ্য়কে। মা-বাবার একমাত্র সন্তান, উজ্জ্বল ভবিষ্য়ত, হঠাৎই সব শেষ। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে যৌন নির্যাতনের ইঙ্গিতও মিলেছে। আর এই ঘটনাই মনে করিয়ে দিচ্ছে অরুণা শানবাগের কথা। ১৯৭৩ সালে মুম্বইয়ের হাসপাতালের ভিতরে ধর্ষণ করা হয়েছিল তাঁকে। ৪২ বছর ধরে ছিলেন কোমায়। (RG Kar Medical Student Death)
কলকাতার বুকে খাস মেডিক্য়াল কলেজের ভিতরে ভয়ঙ্করকাণ্ড। RG কর মেডিক্য়াল কলেজের ভিতরে খুন হয়েছেন ৩১ বছর বয়সি মহিলা চিকিৎসক। তাঁর দু'চোখ থেকে রক্তক্ষরণ, মুখ থেকে রক্তক্ষরণ, গোপনাঙ্গে রক্তের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। মুখে নখের দাগ, ঘাড়ে, পেটে এবং ঠোঁটের ওপর আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে উঠে এসেছে এমনই ভয়ঙ্কর তথ্য়। (Medical Student Death)
নৃশংস অত্য়াচারের পর খুন তো করা হয়েছেই, সেইসঙ্গে তাঁকে যৌন নির্যাতনও করা হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান। আর খাস কলকাতার বুকে হাসপাতালের মধ্য়ে এই নৃশংস ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে আজ থেকে ৫২ বছর আগে মুম্বইয়ের KEM হাসপাতালের মধ্য়ে এরকমই একটি ভয়ঙ্কর-নির্মম-নৃশংস ঘটনার কথা।
১৯৭৩ সালের ২৭ নভেম্বর মুম্বইয়ের কিংস এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালের (KEM) নার্স ২৫ বছর বয়সী অরুণা রামচন্দ্র শানবাগের ওপর চড়াও হয় ওই হাসপাতালেরই ওয়ার্ড-বয় সোনলাল। অরুণা যখন পোশাক বদলাচ্ছিলেন তখন আচমকাই অরুণার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সে। কুকুরের চেন দিয়ে অরুণার গলা বেঁধে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়।
আরও পড়ুন: RG Kar Medical Student Death: সাইকেলে জামা-কাপড় ফেরি করে টিউশন পৌঁছে দিতেন মেয়েকে, RG কর হারিয়ে দিল চিকিৎসক তরুণীর মা-বাবাকে
পরের দিন সকালে যখন অরুণাকে উদ্ধার করা হয়, তিনি সংজ্ঞাহীন। হাসপাতালের মেঝে ভেসে যাচ্ছে রক্তে। কুকুর বাঁধার চেন এত জোরে চেপে বসেছিল অরুণার গলা ও ঘাড়ে যে, আট ঘণ্টার জন্য তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত পৌঁছয়নি। এরপরই কোমায় চলে যান অরুণা। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত চার দশক ধরে কোমাতেই ছিলেন তিনি।
ওই হাসপাতালের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বেডে থাকতেন অরুণা। KEM হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সরা চার দশক ধরে তাঁর উপরে নজর রাখতেন।তাঁকে টিউব দিয়ে খাওয়ানো হত, নিয়মিত পরিষ্কার করা হত। ফলে চার দশক ধরে কোমায় থাকলেও ‘বেড সোর’ হয়নি অরুণার। সেই ওয়ার্ড-বয় সোহনলাল পরে অভিযুক্ত হয় চুরি ও খুনের চেষ্টার অভিযোগে। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল না বলে সাত বছর জেল খেটে ছাড়া পেয়ে যায় সে।
১০ বছর বয়সে বাবাকে হারানো অরুণা। কর্নাটকের হলদিপুর থেকে মুম্বইয়ের পারেলের KEM হাসপাতালে নার্সিংয়ের ট্রেনিং নিতে গেছিলেন।মকিছু দিন পর এই হাসপাতালেরই এক ডাক্তারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়।ম২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টে পরোক্ষে অরুণার স্বেচ্ছামৃত্যুর আর্জি জানান সমাজকর্মী পিঙ্কি বিরানি।মতাঁর আর্জি ছিল, যে লাইফ-সাপোর্ট ব্যবস্থায় অরুণাকে কৃত্রিম ভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে, তা তুলে নিয়ে অরুণার মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করা হোক।
কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সরা পিঙ্কির আর্জির তীব্র বিরোধিতা করেন।ম২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্ট পিঙ্কির আর্জি খারিজ করে দেয়। শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালের ১৮ মে মৃত্য়ু হয় অরুণার। সমাপ্তি ঘটে তাঁর ভয়ঙ্কর কষ্টে ভরা জীবনের।