কলকাতা: আর জি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় চাপানউতোর চলছে। সেই আবহেই কলকাতা হাইকোর্টে ভর্ৎসিত হল রাজ্য। তদন্তের গতিপ্রকৃতি থেকে সন্দীর ঘোষের পদত্যাগ এবং পুনরায় নিয়োগপত্র পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আদালত। কিন্তু আদালতে রাজ্য জানিয়েছে, তদন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়াতেই চলছে। প্রতি মুহূর্তের আপডেটও দেওয়া হচ্ছে পরিবারকে। (RG Kar Medical Student Death)
আর জি কর কাণ্ড নিয়ে মঙ্গলবার একগুচ্ছ জনস্বার্থ মামলার শুনানি হয় কলকাতা হাইকোর্টে। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম সেখানে তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এর উত্তরে রাজ্য জানায়, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় তদন্ত চলছে। পরিবারকে প্রতিনিয়ত তদন্ত সম্পর্কে খবরাখবর জানানো হচ্ছে। (Kolkata Medical Student Death) পরিবার যখন, যা অনুরোধ করেছে, তা পালন করা হয়েছে বলেও জানায় রাজ্য।
আর জি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু নির্যাতিতার উপর অমানবিক অত্যাচার চলেছে, তা একজনের পক্ষে চালানো সম্ভব কি না, উঠছে প্রশ্ন। নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যও আজ সেই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। একজনের দ্বারা এত নৃশংসতা চালানো সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। এর পাল্টা রাজ্য বলে, "এই অভিযোগ ঠিক নয়। একাধিক ব্যক্তি ঘটনায় যুক্ত থাকলে আঘাতের ধরন ভিন্ন হতো।" বিশদ রিপোর্ট এলেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে জানায় রাজ্য।
ঘটনার সময় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন সন্দীপ ঘোষ। নির্যাতিতার পরিবারকে অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার ফোন করে মেয়ে অসুস্থ বলে জানান, পরে আবার ফোন করে মেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে জানান, এমনটাই অভিযোগ। সন্দীপ অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেননি বলে এদিন মন্তব্য করে আদালত। এর পরও কেন তাঁকে তড়িঘড়ি ন্যাশনাল মেডিক্যালের দায়িত্ব দেওয়া হল, প্রশ্ন তোলে আদালত।
নির্যাতিতার পরিবারের হয়ে বিকাশ রঞ্জন জানান, সকাল ১০টা বেজে ৩৫ মিনিটে পরিবারের কাছে ফোন যায় যে, "আপনারা কী ওঁর মা-বাবা। আপনার মেয়ে অসুস্থ। দ্রুত আসুন। এখনই কিছু বলতে পারছি না।" এর মিনিট ১৫ পর ফের ফোন যায়, বলা হয়, "আপনার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।" এর জবাবে নির্যাতিতার পরিবারের কাছে হাসপাতালের তরফে ফোন যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে। কোন নম্বর থেকে ফোন গিয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে রাজ্য। নম্বরটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানায় তারা। যে নম্বর থেকে ফোন গিয়েছিল, সেটি চাওয়া হয়।
হাসপাতালের সর্বত্র সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর যে দাবি উঠছে, সেই নিয়ে আলোচনা চলাকালীন, রাজ্য জানায়, হাসপাতালের প্রত্যেক ইঞ্চি সিসিটিভিতে বন্দি করা সম্ভব নয়। এতে প্রধান বিচারপতি জানান, চাইলে গোটা রাজ্যকে সিসিটিভি-র অধীনে আনা যেতে পারে। কোনও কিছুই অসম্ভব নয়।
এদিন রাজ্য আদালতে জানায়, এখনও পর্যন্ত ৩০-৩৫ জনের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। সেই নিয়ে রাজ্যের থেকে কেস জায়েরি চেয়েছে আদালত। সেই কেস ডায়েরি দেখে পরবর্তী নির্দেশ দেবে আদালত। তবে নির্যাতিতার পরিবার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং অন্য আবেদনকারীদের তরফে সিবিআই তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। এর আগে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদিও জানান, পুলিশকে রবিবার পর্যন্ত সময় দিচ্ছেন তিনি। এর পর সিবিআই-এর হাতে মামলা তুলে দেওয়া যেতে পারে।