কলকাতা: প্রথমে নবান্ন, তারপরে কালীঘাট। পরপর বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর, অবশেষে সোমবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক হল সরকারের। মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে হল বৈঠক। ২ জন স্টেনোগ্রাফারকে সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে বৈঠক করলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এরপর সাংবাদিক বৈঠক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জুনিয়র চিকিৎসকদের আর্জি জানান কাজে ফেরার জন্য। আর জি কর কাণ্ডে সিপি, ২ স্বাস্থ্য কর্তাকে সরাল সরকার। কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে বদলানোর সিদ্ধান্ত সরকারের। কলকাতা পুলিশের ডিসি নর্থকেও সরানোর সিদ্ধান্ত সরকারের। সরানো হল স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে। 


এদিন বৈঠক থেকে বেরিয়ে বাসে করে সোজা স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্নামঞ্চে যান জুনিয়র চিকিৎসকরা। সেখান থেকে তাঁরা বলেন- 'আমরা আলোচনায় বসার সদিচ্ছা জানিয়েছিলাম আগেই। দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে সরিয়ে দেবেন। আন্দোলনের বড় জয় এটা। স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা, ডিসি নর্থকে সরানো হবে, এটাও আমাদের আন্দোলনের বড় জয়। সাধারণ মানুষ ও আমাদের আন্দোলনের চাপেই নতি স্বীকার করল প্রশাসন। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, আগামী দিনেও হবে। তবে এটা মৌখিক আশ্বাস। আগে বাস্তবায়ন হবে, সুপ্রিম শুনানি শুনব। তারপর সব মেডিকেল কলেজের সঙ্গে কথা বলে কর্মবিরতি তোলার কথা ভাবা হবে। আমাদের বোনের বিচার এখনও বাকি আছে I লড়ছি, লড়ব।'



এর আগে জুনিয়র চিকিৎসকরা বৈঠক শেষে একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, 'স্বাস্থ্য ভবন সাফাই অভিযানে নেমেছিলাম। সম্পূর্ণ হয়নি এখনও তা। আমরা এখনও আলোচনা সদর্থক তখনই বলব যখন মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ কমিশনার, স্বাস্থ্য অধিকর্তাদের সরানোর কাজ সম্পন্ন করবেন। আমাদের সুরক্ষা নিয়ে আরও কিছু পদক্ষেপ করার আছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন টাস্ক ফোর্স গঠন করবেন। সেই বিষয়ে আমরা একমত হতে পারিনি। আমরা বৈঠকের পথ খোলা রেখে দিলাম। সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে তাকিয়ে আছি।'     


বৈঠক শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষ থেকে ৪২ জন মিনিটসে সই করেছেন। রাজ্যের তরফে মুখ্যসচিব সই করেছেন। আমরা উভয়পক্ষ খুশি এতক্ষণ মিটিং করতে পারলাম বলে। ওরা যা বলতে চেয়েছিলেন সেটা রাখতে দিয়েছি। আমাদের বক্তব্য আমরা চেষ্টা করেছি ওদের গুরুত্ব দিয়ে করার।' 


আরও পড়ুন, 'আন্দোলনের চাপে সিপির পদত্যাগের দাবি মানা হয়েছে', ৫ ঘণ্টা বৈঠক শেষে জানালেন জুনিয়র চিকিৎসকরা


তিনি আরও বলেন, 'ওদের ৫ দফার দাবি ছিল। প্রথমটা সিবিআই করছে। ওটা আমাদের হাতে নেই। বাকি ৪টি দাবি ছিল। ৩টি নাম দিয়েছিল- আমাদের ওদের বোঝালাম একসঙ্গে পুরো ঘর খালি করলে প্রশাসন চলবে কী করে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেহেতু ছাত্র-ছাত্রীরা বলেছেন, ওদের বক্তব্য গুরুত্ব দিয়েছি।' তিনি জানান, 'আগামীকাল বিকেল ৪টার পরে কলকাতা পুলিশে বদল আনব, কাল বিকেল ৪টার পরে আরও কিছু রদবদল আনব, বিনীত যেখানে কাজ করতে চেয়েছেন, সেখানে পাঠানো হবে। আরও কিছু বদল আসবে পুলিশের কিছু পদে।' 


প্রসঙ্গত, সোমবার জুনিয়র ডাক্তারদের দ্বিতীয়বার কালীঘাটে বৈঠকের জন্য ডেকে পাঠান মুখ্যসচিব। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ভাবে, চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন। পঞ্চম ও শেষবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তাঁদেরকে ডাকা হচ্ছে। এর আগে নবান্নে এবং কালীঘাটের প্রস্তাবিত বৈঠকে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল লাইভ স্ট্রিমিংয়ের শর্ত! এই পরিস্থিতিতে সোমবার মুখ্যসচিব স্পষ্ট করে দেন আপনাদের আগের দিনের বক্তব্য অনুযায়ী, এই বৈঠকের কোনও ভিডিয়োগ্রাফি বা সরাসরি সম্প্রচার হবে না, যেহেতু বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। পরিবর্তে বৈঠকের কার্যবিবরণীতে উভয়পক্ষের সই থাকবে। ১৬ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠকের আয়োজন করা হয়। 


উল্লেখ্য এর আগেও আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফে বলা হয়েছিল- 'আমরা বিশ্বাস করি আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হবে একমাত্র এবং বারবার করে এই ফাইনাল কল, ফাইনাল কল বলা হচ্ছে, এরকম চাপটা তৈরি করা হচ্ছে কেন সরকারের তরফ থেকে? আমরা তো আলোচনা চাইছি। স্বচ্ছতাও চাইছি, আলোচনাও চাইছি। খুব সাধারণ দাবি, এইটুকু মেনে নিলেই হয়।' 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে