মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: দুর্গাপুর থেকে ইউক্রেন। স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। আর সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে দুর্গাপুরের দুই যমজ বোন পাড়ি দিয়েছিল ইউক্রেনে। ভবিষ্যৎ যে ভয়াবহ হতে চলেছে তা দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি কেউ। বর্তমানে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার অতর্কিত হামলায় ভেঙে চুরমার সেই স্বপ্ন। ভারী বুটের আওয়াজ, বোমা-গুলির হামলায় জীবন বাঁচিয়ে রাখাই এখন চিন্তার হয়ে উঠেছে।


এদিকে যুদ্ধ আবহে আটকে পড়া দুই মেয়েকে বাড়ি ফেরাতে সরকারের কাছে আকুল আর্জি তাঁদের বাবা-মায়ের। মা পেশায় স্বাস্থ্য কর্মী, বাবা একটি রাষ্ট্রায়াত্ত তেল গ্যাস সংস্থার অস্থায়ী কর্মী। ছোটবেলা থেকেই যমজ দুই বোন রুমকি আর ঝুমকির স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়া। কিন্তু দুর্গাপুরের যমজ দুই বোনের দু'চোখের স্বপ্ন যে এইভাবে ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে তা নিজেরাও বুঝতে পারেননি। 


আরও পড়ুন, ইউক্রেন দখল কার্যত সময়ের অপেক্ষা, আত্মসমর্পণ করলে বন্ধ হবে যুদ্ধ, হুঁশিয়ারি রাশিয়ার


দুর্গাপুরের কোকওভেন থানার অন্তর্গত রাতুড়িয়া গ্রামের ঝুমকি ও রুমকি গঙ্গোপাধ্যায় ইউক্রেনে খারকিব ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন গত ডিসেম্বর মাসে। এরপর এম. বি. বি. এস পড়াশোনা করে জীবনের নতুন এক লড়াইয়ে নামে এই দুই যমজ বোন। বেশ চলছিল জীবন। কিন্তু রুশ হামলায় এবার অনিশ্চিত হয়ে পড়ল সেই জীবন। হাতের টাকা শেষ, নেই শীতের বস্ত্রও। জল নেই, আলো নেই। আছে কেবল সাইরেন-বোমের মুর্হুমুহু শব্দ। বর্তমানে প্রাণ বাঁচাতে ইউনিভার্সিটির নিজস্ব বেসমেন্ট এখন তাঁদের মাথা গোঁজার জায়গা। 


পরিবারের তরফে জানান হয়েছে, শেষবারের মতো মেয়েদের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ হয় শুক্রবার সকালে। তাও বেশিক্ষণ কথা বলা যাচ্ছে না যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই পরিস্থিতিতে এখন কীভাবে ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরবে সেই চিন্তাই করছেন মা সুনন্দা গঙ্গোপাধ্যায় এবং বাবা ধীরেন গঙ্গোপাধ্যায়। দুর্গাপুরের প্রণবানন্দ স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছিল দুই বোন এরপর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল দুর্গাপুরেরই আরও একটি প্রতিষ্ঠান থেকে। এরপর বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পর, শেষে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ইউক্রেন পাড়ি দুই বোনের। স্বপ্ন পূরণের স্বপ্ন উড়ান যেন আজ অনেকটা ধূসর হয়ে গেছে ভারী বুটের শব্দে। দুই মেয়েকে এখন ফিরে পেতে চাইছেন বাবা মা। চাইছেন সরকার ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুক দুই মেয়েকে।