ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, সন্দেশখালি : সন্দেশখালিতে ( Sandeshkhali ) ক্ষোভ থামছে না কিছুতেই।  দফায় দফায় সন্দেশখালি ছুটে যাচ্ছেন ডিজিপি রাজীব কুমার। কার্যত তেড়ে আসছেন গ্রামবাসীরা, 'এতদিন কোথায় ছিলেন? এতদিন কোথায় ছিলেন?' 


শেখ শাহজাহানের ( Sheikh Sahajahan ) ভাই সিরাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঝুপখালি। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় বেড়মজুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে। আর এই পরিস্থিতিতে, সন্দেশখালিতে ৯ টি জায়গায় জারি রইল ১৪৪ ধারা ( Sec 144 ) । শুক্রবার দুপুরের দিকে সন্দেশখালির বেড়মজুরের বটতলায় নতুন করে বিক্ষোভ দানা বাঁধে। অশান্তির জেরে পুলিশের ধরপাকড় শুরু হয়ে যায়। কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দাকে গ্রেফতার করতেই আবার উত্তেজনা বাঁধে এলাকায়। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ l তুলেছেন স্থানীয়রা। রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ শুরু করেন তাঁরা। মহিলা পুলিশ দিয়ে বিক্ষোভকারীদের ঠেলে সরানোর পর উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। পুলিশ গায়ে হাত তুলছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় মহিলারা। রাস্তায় বেরিয়ে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন স্থানীয় মহিলারা। ধৃতদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হলে রাস্তায় শুয়ে পড়ে বাধা দেন গ্রামবাসী মহিলারা। 

এদিনই সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহান ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতার অজিত মাইতির বাড়িতে ভাঙচুর শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বাড়িতে ঢুকে তৃণমূল নেতার উপর চড়াও হন স্থানীয়রা। মারা হয়েছে  বলে এডিজি দক্ষিণবঙ্গকে অভিযোগ করেন অজিত মাইতি। আইন হাতে তুলে নিলে গ্রেফতার করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার। 


ক্ষোভের আগুন নেভার নামই নেই। বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবার অশান্তির আগুন নিভে আসা তো দূরে থাক, লেলিহান শিখা আরও উঁচুতে উঠল।  শেখ শাহজাহানের ভাই সিরাজউদ্দিনের ভেড়ির আলাঘরে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিলেন গ্রামবাসীরা। সিরাজউদ্দিন শেখের বিরুদ্ধে জোর জুলুম, মারধর, আবাস ও জবকার্ডের টাকা আত্মসাতের মতো গুচ্ছগুচ্ছ বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা। একেবারে রুদ্রমূর্তি নিলেন সন্দেশখালির মেয়েরা। হাতে লাঠি, ঝাঁটা নিয়ে রাস্তায় নামলেন মহিলারা। এক প্রতিবাদী বললেন, ' এদের জন্য় আমরা ঘর বাড়ি কিছু পাইনি। আমাদের টাকা পয়সা নিয়েছে ঘর দেবে বলে, তাও দেয়নি। সব টাকা পয়সা খেয়েছে।  ' 


গন্ডগোলের জেরে বেড়মজুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৪৪ ধারা জারি করল পুলিশ। তৃণমূলের নেতা অজিত মাইতির বাড়িতেও ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত জনতাগ্রামবাসীদের অভিযোগ, ' অজিত মাইতির নেতৃত্বে এসব হচ্ছে। আমাদের ভয় দেখায়। ' 


এদিকে শাহজাহানকে গ্রেফতার না করা অবধি ক্ষোভের আগুন নিভবে না, স্পষ্ট করে দেন সন্দেশখালির মহিলাদের একাংশ। তাঁদের বার্তা , ' শাহজাহানকে গ্রেফতার  করলে আমরা ভালভাবে বাঁচতে পারব। আমরা শাহজাহানকে গ্রেফতার চাই। সিরাজকে গ্রেফতার চাই। আজিত মাইতিকে আমরা গ্রেফতার চাই। আমাদের প্রচুর সম্পত্তি নিয়ে নিয়েছে। ' 


গত কয়েকদিন ধরেই গ্রামে ঘুরছেন পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা, এলাকায় ঘুরছেন স্থানীয় বিধায়ক, দফায় দফায় সন্দেশখালি ছুটে যাচ্ছেন ডিজিপি রাজীব কুমার, কিন্তু সন্দেশখালিতে ক্ষোভ থামছে না কিছুতেই। 


আরও পড়ুন : 


অগ্নিগর্ভ সন্দেশখালি, ভোজেরহাটেই BJP কে আটকালো পুলিশ, তর্কতর্কির পর আটক লকেট