সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, সন্দেশখালি: একরাশ ভয় বুকে নিয়েই জীবনের দ্বিতীয় বড় পরীক্ষায় বসল সন্দেশখালির উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা! ১৪৪ ধারা, পুলিশের ভারী বুটের শব্দ আর থমথমে পরিবেশের মধ্যেই, মা-বাবা-আত্মীয়দের সঙ্গে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছল তারা। ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা কেমন হবে, সেই উৎকণ্ঠার মধ্যেই সন্দেশখালির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ধরা পড়ল অভিভাবকদের গলায়। 


সন্দেশখালির ভবিষ্যৎ কী? সেখানকার পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ কী? সংশয়, ভয় আর আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে সবাইকে। এমন আবহেই জীবনের আরেক বড় পরীক্ষার মুখোমুখি সন্দেশখালির পড়ুয়ারা।


সন্দেশখালি রাধারানি হাইস্কুল। এখানে উচ্চ মাধ্যমিকের সিট পড়েছে। অন্য দ্বীপগুলি থেকে মোট ৫টি স্কুলের সিট পড়েছে এখানে। এক অভিভাবক দিলীপকুমার পাত্র বলেন, 'একটা ছাত্রের পিছনে অন্তত বাড়ি থেকে ৪-৫ জন আসতে হচ্ছে। সেজন্য ভয়ের একটা আবহ নিশ্চয়ই মনের ভিতরে আছে।'


গত দেড়-দুই সপ্তাহ ধরে এখানে যে অশান্তির আবহর মধ্যে যা চলছে, তার মধ্যে ছাত্র ছাত্রীদের সিট এখানে পড়েছে, স্বাভাবিকভাবে অভিভাবকরা যথেষ্ট উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলেন। ১৪৪ ধারা যে সমস্ত সীমিত জায়গাতে রয়েছে, তার মধ্যে কিন্তু, পড়ছে এই স্কুলটিও।  যদিও, পুলিশ-প্রশাসনের তরফে কিন্তু সমস্ত রকম নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফেরিঘাটে পুলিশ রয়েছে।


বসিরহাট পুলিশ জেলা সুপার হোসেন মেহদি রহমান বলেন, 'এখানে নজর রাখা হচ্ছে। ঠিক আছে। আর বাকি আমরা অ্যানাউন্সমেন্ট করিয়েছিলাম, যে যারা যারা পরীক্ষাপ্রার্থী আছেন, তারা এসে পরীক্ষা দিতে পারেন। ওদের অভিভাবকরাও আসতে পারে। ওটাতে কোনও আমরা বাধা দেব না।'


সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহান, শিবপ্রসাদ হাজরাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না - যে পুলিশের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে, সেই পুলিশই সন্দেশখালির উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের, তাদের মা-বাবাদের বরাভয় দিচ্ছে! কিন্তু, তাঁরা কি ভরসা রাখতে পারছেন? অভিভাবক দিলীপকুমার পাত্র বলেন, 'গার্জেনরা খুব চিন্তার ভিতরে আছি। কারণ ১৪৪ ধারা জারি আছে তো। যতই পুলিশ থাকুক, তবু মনে  একটা ভয় আমাদের ভিতরে আছে।'


উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক স্মরজিৎ মণ্ডল বলেন, 'আমাদের ভয় লাগছিল। অনেকে ভয়ও দেখাচ্ছিল যে তোমাদের ছেলে পরীক্ষা দিচ্ছে ওখানে। কীভাবে দেবে? আমরা সেটা ভয় পাচ্ছিলাম! স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চলে এসেছি।'


বাম জমানার সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, নেতাই থেকে তৃণমূল আমলের সাত্তোর, পাড়ুই বা সন্দেশখালি - বারবার রাজনৈতিক অশান্তির শিকার হয়েছে শৈশব। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পড়ুয়ারা। যারা দেশের ভবিষ্যৎ, এই অশান্তি কি তাদের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে না? শাসক-বিরোধী সব দলের উদ্দেশেই এই প্রশ্ন রাখছেন চোখে-মুখে আতঙ্ক নিয়ে, স্কুলের অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়াদের মা-বাবারা।


আরও পড়ুন: অঙ্কে আতঙ্ক নয়, উচ্চ মাধ্যমিকে সহজেই নম্বর কীভাবে? পরামর্শ শিক্ষকের