পার্থপ্রতিম ঘোষ, উত্তর ২৪ পরগনা: সন্দেশখালিতে যেদিন রাজ্য়ের তিন মন্ত্রী গেলেন, মিটিং করলেন, সেদিনই রাজ্য সরকারের প্রকল্পের প্রচারকদের বাড়ি থেকে ফেরত পাঠালেন সন্দেশখালির ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা। প্রতিবাদী মহিলাদের দাবি, আগে শেখ শাহজাহান (Sheikh Shajahan Arest) গ্রেফতার করতে হবে। তাঁদের প্রত্যাখ্যানেই ফিরতে হল সরকারি প্রকল্পের (Government Project) প্রচারকদের।  


কী কথোপকথন হল?
এদিন সরকারি প্রকল্পের প্রচারকরা ওই এলাকায় গিয়ে জানান সমস্যা সমাধান ও জনসংযোগের জন্য তাঁরা এসেছেন। তখনই পাল্টা এক মহিলা বলেন, 'টাকা দিয়ে কি আমাদের মুখ বন্ধ করা হবে? উত্তম সর্দার আর শিবু হাজরাকে ধরা হয়েছে। কিন্তু এখনও শাহজাহান শেখকে ধরা হয়নি।' তীব্র সমালোচনার পরে সরকারি প্রকল্পের প্রচারক জানালেন, মানুষজন না চাওয়ায় ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা।  


গ্রামবাসীদের আস্থা ফেরাতে রবিবার ব্লক প্রশাসনের (Sandeshkhali Block Administration) গান-প্রচারকের দল পাঠানো হয়েছিল বাড়িতে বাড়িতে। তাঁদের সঙ্গে ছিল ধামসা, মাদল ও বাঁশির সুর। আশ্বাস ছিল, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার (Lakshmir Bhandar), কন্যাশ্রী (Kanyasree), জাতিগত শংসাপত্র সংক্রান্ত কোনও পরিষেবা পেতে সমস্যা হলে, জানালেই দ্রুত সুরাহা হয়ে যাবে। কিন্তু থমথমে সন্দেশখালিতে সেই ধামসা, মাদল আর বাঁশির সুরকে ছাপিয়ে গেল আতঙ্কে মুখ ঢাকা গ্রামবাসীদের ভয় আর ক্ষোভ। পরিস্থিতি এমনই যে সন্দেশখালির প্রতিবাদী ক্ষুব্ধ মহিলাদের ক্ষতে প্রলেপ তো পড়লই না, উল্টে তাঁদের ক্ষোভে ফিরে যেতে হয়েছে রাজ্য সরকারি প্রকল্পের প্রচারকদের। 


সন্দেশখালির বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, 'বাড়ি বাড়ি বাজনা বাজিয়ে এলেও আমরা খুশি নই। আমরা শান্তিতে নেই এখন। আমরা শান্তিই চাই। উত্তম সর্দার আর শিবু হাজরাকে ধরা হয়েছে। কিন্তু এখনও শাহজাহান শেখকে ধরা হয়নি।' শেখ শাহাজাহানকে গ্রেফতার করার দাবি কেন? বাসিন্দারা বলছেন, 'শাহজাহান আছে তো। ওইটাই তো মাথা। আমরা খুশি নই। আমাদের খুশি করানোর জন্য এসেছে।'


শান্তি ও আস্থা ফেরাতে রাজ্যের তিন মন্ত্রী যেদিন সন্দেশখালিতে পা রাখলেন। পুষ্পবৃষ্টি করা হল পার্থ ভৌমিক, সুজিত বসু, বীরবাহা হাঁসদার উপর। সেদিনই সন্দেশখালি ২ নম্বর ব্লকের বিডিও অফিস থেকে পাঠানো সমস্যা সমাধান ও জনসংযোগের প্রতিনিধি দলকে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের একাংশ। এলাকায় পৌঁছে সরকারি প্রকল্পের প্রচারক স্বপন কর্মকার বলছিলেন, 'বৌদি আমরা সমস্যা সমাধান ও জনসংযোগের মাধ্যমে এসেছি।  আপনাদের যদি কোনও সমস্যা থাকে, যেমন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, এই সব যদি না পেয়ে থাকেন, তাহলে সমস্যা সমাধান ও জনসংযোগের মাধ্যমে গিয়ে আপনারা যদি কাগজপত্র জমা দেন, তাহলে এগুলো অবিলম্বে, খুব তাড়াতাড়ি কাজ হবে। আরও যদি কোনও সমস্যা থাকে।' তখনই সমস্বরে বাসিন্দারা বলে ওঠেন, তাঁরা চান না এসব, নতুন করে কোনও পরিষেবাও চাইছেন না। প্রত্য়াখ্যানের মুখে পড়ে এদিন তড়িঘড়ি ফিরে যায় প্রশাসনের পাঠানো প্রচারক দল।


সরকারি প্রকল্পের প্রচারক স্বপন কর্মকার বলেন, 'এখন যেমন পরিস্থিতি চলছে, সেই পরিস্থিতির মধ্যে অনেকে বেরোতে পারছে না। সেই হিসেবে আমাদের হয়তো ফিরে যেতে হচ্ছে। চাইছে না। মানুষজন চাইছে না। মানুষের ওপরেই তো সব কিছু নির্ভর করে, ভাল-মন্দ সমস্ত কিছু। তাই ফিরে যাচ্ছি।'


প্রশাসনিক সাহায্য বা সরকারি প্রকল্পের সুবিধার থেকেও এখন দোষীদের শাস্তি চেয়ে সম্ভ্রমের দাবিতে অনড় সন্দেশখালি।


আরও পড়ুন: সোমবার পদোন্নতি হবে? বেতন বাড়বে? প্রেমে সমস্যা কাদের? কী বলছে রাশিফল?