কলকাতা: ১দিন-দু'দিন করে পেরিয়ে গেল ৫২টা দিন। এখনও বেপাত্তা সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা শেখ শাহজাহান। তাঁর গ্রেফতারির দাবিতে এবার সন্দেশখালির খুলনা ফেরিঘাট থেকে কর্ণখালি - দিকে দিকে পোস্টার পড়ল। নিজের প্রাপ্য টাকা চাইতে গেছিলেন, তখন শেখ শাহাজাহান, উত্তম সর্দারের সামনে অকথ্য অত্যাচার করা হয়। পুলিশে অভিযোগ জানাতে গেলে পাঠানো হয় শিবু হাজরার কাছে। এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন সন্দেশখালির এক বাসিন্দা। 


এতদিন ধরে টানা অশান্ত রয়েছে সন্দেশখালি। পরিস্থিতি সামলাতে প্রায়শই সন্দেশখালি দৌড়তে হচ্ছে রাজ্যের মন্ত্রীদের। এদিনও সন্দেশখালিতে গিয়েছিলেন রাজ্য়ের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এবং সুজিত বসু। এখন ক্ষোভে ফুঁসছে সন্দেশখালি। খুলনা ফেরিঘাট এলাকা, কর্ণখালি এলাকায় শাহজাহানকে গ্রেফতার করার দাবি তুলে একাধিক পোস্টার দেখা যায়। গতকাল এই এলাকাতেই গিয়েছিলেন পার্থ ভৌমিক ও সুজিত বসু। মন্ত্রীদের সামনে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন সন্দেশখালির বাসিন্দারা। মন্ত্রীরা ফিরতেই শেখ শাহজাহানের গ্রেফতার চেয়ে পড়েছে পোস্টার।


শেখ সিরাজুদ্দিনের বিরুদ্ধে এফআইআর:
গ্রামবাসীদের অভিযোগ জানানোর জন্য ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছিল। বেড়মজুরের ঝুপখালিতে আজও পুলিশের ক্যাম্পে জমা পড়ছে একের পর এক অভিযোগ। কেউ আসছেন শেখ শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে জমি জবরদখল, হুমকির অভিযোগ নিয়ে। কেউ আবার অত্যাচারের অভিযোগ জানাতে এসেছেন। বিশেষভাবে সক্ষম এক ব্যক্তি হুইল চেয়ারে চড়ে এসেছেন অভিযোগ জানাতে। অভিযোগ, তাঁর পৈতৃক মিষ্টির দোকান দখল করে নেন শেখ শাহজাহানের ভাই শেখ সিরাজউদ্দিন। সেই অভিযোগই জানাতে এসেছেন তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, শেখ শাহজাহান, তাঁর ভাই শেখ সিরাজউদ্দিন এবং সিরাজ-ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা অজিত মাইতির বিরুদ্ধে ১০০টিরও বেশি  অভিযোগ জমা পড়েছে এবং সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অশান্তি এড়াতে বেড়মজুর এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে প্রচুর পুলিশ। রবিবার রাতে অবশেষে শেখ শেহজাহানের ভাই শেখ সিরাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। এফআইআর দায়ের হলেও এখনও সিরাজের খোঁজ পায়নি পুলিশ


আটক অজিত মাইতি:
এদিকে রবিবারই বেড়মজুরের তৃণমূল নেতা অজিত মাইতিকে আটক করেছে পুলিশ। গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়ে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন বেড়মজুরের (TMC Leader Detained) তৃণমূল নেতা অজিত মাইতি। জনরোষ থেকে বাঁচতে অন্য বাড়িতে লুকিয়ে পড়েন তিনি। এর আগেও অজিত মাইতির বাড়িতে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। এদিনও তাঁকে তাড়া করেন গ্রামবাসীরা। রবিবারই সন্দেশখালিতে গিয়ে সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক যা বলেন তা কার্যত দলের তরফ থেকে অজিত মাইতিকে ঝেড়ে ফেলে দেওয়াই বুঝিয়েছে। পার্থ ভৌমিক এদিন জানিয়েছেন, পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে অজিতকে (Sandeshkhali tmc leader)। অন্যায় করেছেন বলেই অজিত গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন বলেও দাবি করেছেন তিনি। তারপর রবিবার সন্ধেতেই অজিত মাইতিকে আটক করে পুলিশ।


এদিন আরও গ্রেফতার:
বাম-বিজেপির পর এবার সন্দেশখালিকাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছেন ISF নেত্রী। ধৃতের নাম আয়েশা বিবি। রবিবার সকালে তাঁকে গ্রেফতার করেছে সন্দেশখালি থানার পুলিশ। পুলিশের দাবি, সন্দেশখালিতে যে অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তাতে ইন্ধন রয়েছে মিনাখাঁর বাসিন্দা এবং ISF-এর মিনাখাঁ বিধানসভা কমিটির সদস্য আয়েশা বিবির। সেই কারণেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। এর আগে সন্দেশখালিকাণ্ডে গ্রেফতার হন সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দার ও বিজেপি নেতা বিকাশ সিংহ। তৃণমূলের সাসপেন্ডেড নেতা উত্তম সর্দার ও ব্লক সভাপতি শিবু হাজরাকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে ৫২ দিন ধরে অধরা সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা শেখ শাহজাহান। 


এদিনই কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলকেও সন্দেশখালি থেকে বাধা দিয়েছে পুলিশ। কংগ্রেস কর্মীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় পুলিশের। অসুস্থ হয়ে পড়েন কংগ্রেস নেতা সৌম্য আইচ রায়। 


আরও পড়ুন: ১০০ অভিযোগ, শাহজাহানের ভাই সিরাজুদ্দিনের বিরুদ্ধে FIR পুলিশের