উত্তর ২৪ পরগনা: গত ১ মাসের উপরে অধরা শেখ শাহজাহান (Sheikh Shajahan)। সন্দেশখালি হামলাকাণ্ডের (Sandeshkhali Attack) পর এনিয়ে কার্যতই উত্তাল রাজ্য-রাজনীতি। কেন তাকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ (Police) ? তবে তাকে আড়াল করে রাখা হয়েছে ? এনিয়ে চাপানউতোরের শেষ নেই। বিরোধীরা অনেক আগেই ভবিষ্যতবাণী করে দিয়েছে, যে 'শেখ শাহজাহান বাংলাদেশ পালিয়েছেন।' কিন্তু খোঁচাখুচির বহর বাড়লেও ধরা পড়েননি তিনি।এদিকে বছরের বছর যা চুপ করেছিলেন, নিজেদের জমি জলাঞ্জলি দেওয়ার পরেও। জোর করে বিঘার পর বিঘা ভেড়ি দখলের অভিযোগ উঠেছিল শেখ শাহজাহান ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে । সম্প্রতি সেই মানুষগুলিও শেখ শাহজাহান ফেরার হয়ে যাওয়ার পর, সরব হয়েছেন। তবে এবার বোধহয় সব সীমা পার , এবার অত্যাচারের অভিযোগে মুখ খুলছে সন্দেশখালি। ৩৩ দিনে উলটপূরাণ, গ্রামবাসীদের প্রতিরোধের মুখে নৌকোয় চেপে পালাল তৃণমূল (TMC) !
সন্দেশখালি সরগরম!গ্রামবাসীরা মারমুখী! লাঠি-বাঁশ হাতে রাস্তায় মহিলাদের ভিড়!তৃণমূল কর্মীরা পালাচ্ছেন!পলিমাটি মাড়িয়ে নদীর জলে ঝাঁপ দিচ্ছেন। কেউ সাঁতরে গিয়ে লঞ্চে ওঠার চেষ্টা করছেন।গ্রামবাসীদের একাংশের প্রতিরোধে এভাবেই পিছু হটলেন তৃণমূল কর্মী ও সমর্থকরা। গ্রামবাসীরা বলেন,দূর হঠো,দূর হঠো।আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ, শান্তি চাই, শান্তি চাই।যার জেরে প্রশ্ন উঠে গেল, শেখ শাহজাহান বেপাত্তা হতেই, কি তাঁর গড়ে গ্রামবাসীদের একাংশের তাড়া খেয়ে পালাল তৃণমূল? বেতাজ বাদশা উধাও হতেই কি সন্দেশখালিতে আলগা হতে শুরু করেছে তৃণমূলের ভিত?
আক্রান্ত তৃণমূলকর্মী বলেন, আমরা মিছিল করে খেয়ায় উঠেও গেছি, কিছু দৃষ্কৃতী, বিজেপির আছে, তারা এসে আমাদের কাচের বোতল ইট, কিছু মহিলাও ছিল, তারা লাঠিসোটা এনে, আমাদেরকে বোট আটকে দিয়ে আমাদের মারধর করেছে, ১৫-২০ জনকে। কিছু লোক জলে ঝাপিয়েও চলে এসেছে। আমাদের ঘাটে দাঁড় করিয়ে মারছে। বিজেপি নেত্রী অর্চনা মজুমদার বলেন, আজকে সন্দেশখালিতে যে ঘটনাটা ঘটল সেটা হল গণরোষের বহিঃপ্রকাশ। মুহূর্তের মধ্য়ে প্রায় কয়েক হাজার লোক রাস্তায় এসে গেছে এবং যেভাবে আজ প্রতিরোধ দেখলাম, সন্দেশখালি জেগে উঠেছে। তৃণমূলের এই শোষণ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানুষ রাস্তায় নেমেছে।
ED-র তলবে বুধবারও হাজিরা দেননি সন্দেশখালিকাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শেখ শাহজাহান। ইডি সূত্রে দাবি, শেখ শাহজাহানের তরফে তাঁর আইনজীবী ইডির কাছে অতিরিক্ত সময় চেয়ে আবেদন করেন। যদিও আইনজীবীর কোনও আবেদনই গ্রহণ করেনি কেন্দ্রীয় এজেন্সি। আর এদিনই CBI ও রাজ্য পুলিশকে নিয়ে গঠিত SIT-এর ওপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। আর এরইমধ্য়ে বুধবার কেন্দ্রীয় বঞ্চনা-সহ বিভিন্ন অভিযোগে সন্দেশখালি ২ নম্বর ব্লকে ত্রিমোহিনী, কাহারপাড়া, দাসপাড়া, পাত্রপাড়া-সহ বিভিন্ন এলাকায় মিছিল করছিল তৃণমূল। সেই সময় পাল্টা মিছিলে নামেন গ্রামবাসীদের একাংশ! অনেকের হাতেই দেখা যায় লাঠি, বাঁশ, রড!!
স্থানীয় সূত্রের দাবি, তীব্র উত্তেজনার আবহে গ্রামবাসীদের রোষ আছড়ে পড়ে তৃণমূল কর্মী ও সমর্থকদের ওপরে। অভিযোগ ছিলই যে বহিরাগতদের নিয়ে এসে এলাকায় মিছিল করছে তৃণমূল! আর দাবানলের গতিতে সেই খবর ছড়াতেই হু হু করে গ্রামবাসীদের একাংশ জড়ো হন! শুরু হয়ে যায় তুলকালাম। রাতে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি এবং জেলা পরিষদের সদস্য় শিবপ্রসাদ হাজরার ভেড়িতে। ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।শেখ শাহজাহানের দলবল জোর করে বিঘার পর বিঘা ভেড়ির জমি দখল করেছে। সেই অত্যাচারের বিরুদ্ধেই গ্রামবাসীদের একাংশ গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন বলে দাবি করছে বিজেপি।
আরও পড়ুন, 'কাটমানির টাকায় দিঘায় জগন্নাথ ধাম..', বিস্ফোরক শুভেন্দু
বিজেপি নেত্রী অর্চনা মজুমদার বলেন, একদল বাইকবাহিনী ঢুকিয়ে গ্রামের মানুষকে ভয় দেখাতে যায়, তখন মানুষ যে যা পেরেছে লাঠি-সোটা, ঝাঁটা, কুড়ুল, কোদাল যা নিয়ে, মানুষ হু হু করে রাস্তায় বেরিয়ে গেছে। সন্দেশখালি শেখ শাহজাহান ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা উত্তম সর্দার বলেন, সিপিএম এবং বিজেপির কিছু আশ্রিত গুন্ডা, সন্ত্রাসবাদী, তারা প্রত্যেক বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে। এই ২-৩ দিন ধরে ওরা, সেই গুন্ডারা, সন্ত্রাসীরা, যাদের মানে, জীবনে কোনও জায়গায় দেখা যায় না, হঠাৎ হঠাৎ থাকে, হঠাৎ হঠাৎ এসে তারা উৎপন্ন হয়। হঠাৎ দেখলেন আপনারা যে আমরা জমি দখল করে নিচ্ছি, আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।তুলকালামের সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে রীতিমতো চাপে পড়ে পুলিশ! ফেরি সার্ভিস কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রাখতে হয়।