কলকাতা: সন্দেশখালিকাণ্ডে ভাইরাল হল আরও একটি অডিও ক্লিপ। নয়া অডিও ক্লিপে বিস্ফোরক অভিযোগ করতে শোনা যাচ্ছে কর্ণখালি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তথা সন্দেশখালির আন্দোলনকারী সুজয় মণ্ডলকে। ভাইরাল অডিও-তে বিজেপির বিরুদ্ধে সন্দেশখালির মহিলা আন্দোলনকারীদের প্রভাবিত করার অভিযোগ শোনা গিয়েছে। (Sandeshkhali Viral Audio)


সন্দেশখালির ঘটনায় আগেও একাধিক ভাইরাল অডিও সামনে এসেছে। সেই নিয়ে নতুন করে উত্তপ্তও হতে দেখা গিয়েছে এলাকাকে। তৃণমূল নেতাদের মাটিকে ফেলে লাঠিপেটা করার দৃশ্যও চোখে পড়েছে। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও সন্দেশখালি নিয়ে নয়া একটি ভাইরাল অডিও সামনে এল, যার সত্যতা যাচাই করেনি এবিপি আনন্দ। তবে কথোপকথনে বিজেপি নেতা শুভঙ্কর গিরির নাম উঠে এসেছে। (Sandeshkhali Case)


অডিওয় তিনটি কণ্ঠস্বর শোনা গিয়েছে, যার মধ্যে একটি সুজয়ের, দ্বিতীয়টি বিজেপি নেত্রী পিয়ালি দাস ওরফে মাম্পির আত্মীয় সৈকত দাস ওরফে পিকাই এবং তৃতীয়টি এক মহিলার। অডিও-র কথোপকথন এগিয়েছে এভাবে-


সুজয়: আরে কত রেকর্ড নিবি! আমাকে মার্ডার করতেও বলেছিল, ঠিক আছে! আন্দোলনের শুরুতে শুভঙ্কর বসেছিল, "সুজয়দা কলাগাছ যদি কেটে ফেলতে হয়, তাহলে কেটে দাও। দাদা বলে দিয়েছে। ঠিক আছে!"


সুজয়: শুভঙ্কর আমাকে বলেছিল...আন্দোলনের শুরুতেই যেদিন ও আমাকে নম্বর দেয়। বসেছে, "কলাগাছ যদি কেটে দিতে হয়, তাহলে কেটে দাও।"


মহিলার কণ্ঠস্বর: বুঝতে পারলাম না, কলাগাছটা কী?


সুজয়: কলাগাছটা হচ্ছে, যদি কাউকে মেরে দিতে হয়। 


মহিলার কণ্ঠস্বর: ওরে, বাবা রে বাবা।


সুজয়: আমি বললাম, কী বলছো তুমি? মার্ডার করতে বলছো? এসব কী! এসব কোরো না। ঠিক আছে!


নতুন করে এই কথোপকথনের রেকর্ড ছড়িয়ে যাওয়ার পর চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এ নিয়ে এবিপি আনন্দে মুখ খোলেন সুজয়। অডিও রেকর্ডিং-এ তাঁরই গলা রয়েছে বলে মেনে নেন তিনি। সুজয় বলেন, "যাদের সঙ্গে এই কথাগুলো আমি বলেছি, তারা বর্তমানে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। বহুরকম ভাবে আমাকে টানার চেষ্টা করা হয়েছিল। রাজি হইনি বলে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। কলাগাছের কথা কলাগাছই হবে, অনুমানের উপর নির্ভর অনেক কিছুই হবে।"


এ নিয়ে এবিপি আনন্দে পিকাই বলেন, "আমি ছিলাম, সুজয় ছিল, আমার দিদি পিয়ালি ছিল (আন্দোলনে)। দাদা সামলে নেবে বলেছে...নোংরা খেলা খেলছে। আন্দোলনটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। সরে এসেছিলাম।"


ভাইরাল অডিও-তে কথোপকথনের আরও যে অংশটি নজর কেড়েছে তা হল-


সুজয়: পিকাই যদি এবার সিাইডি-কে বলে যে স্যর, এই ব্যাপারটা পুরো, সম্পূর্ণ ফলস। আন্দোলন হয়েছিল জমি নিয়ে...


পিকাই: কেসটার ব্যাপারে বল...


সুজয়: আন্দোলন হয়েছিল জমি নিয়ে। জমি জবরদখল, লিজের টাকা না দেওয়া, পেটাপিটি, এই নিয়ে আন্দোলন হয়েছিল। আমরা এটার সাক্ষী ছিলাম। আমরা গ্রেফতার হয়ে যাওয়ার পর মেয়েরা ওই বিজেপি-র কথা শুনে এগুলো করেছে। কী কেস দাঁড়াবে বুঝতে পারছিস?


সন্দেশখালির আন্দোলন এক বিষয় নিয়ে শুরু হলেও, সময়ের সঙ্গে তাতে রাজনীতির রং লেগেছে বলে জানান সুজয়।  তিনি বলেন, "মানুষের অভাব-অভিযোগ নিয়েই আন্দোলন হয়েছিল। সেখানে কোনও রং ছিল না। রাজনৈতিক স্বার্থে এগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি যখন গ্রেফতার হই, তার পর আন্দোলনের অভিমুখটা...মুখ খুলতে সাহস পায় মেয়েরা।


এই অডিও ক্লিপটি সামনে আসতেই আবারও বিজেপি-র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সরব হয়েছে তৃণমূল। সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাত বলেন, "রাজনৈতিক জমি দখলের জন্য বিজেপি কতটা নীচ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে পারে, এই অডিও ক্লিপ তা প্রমাণ করছে।" যদিও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ রাজ্যে বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য, "যেখানে সিবিআই-এর অস্থায়ী শিবির হয়েছে, কত মানুষজন অভাব-অভিযোগ, ক্ষোভ, জীবন-যন্ত্রণা, অত্যাচার, জমি কেড়ে নেওয়ার কথা বলেছেন। এই ধরনের অডিওয় আর জনমনে কোনও প্রভাব পড়বে না।"


এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাইলে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি মাম্পি। শুভঙ্করের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এমন কিছু বলেননি তিনি। এব্যাপারে কিছু জানা নেই তাঁর।


আরও পড়ুন: TMC MP Dev: আমি গরু চোর হলে, ইন্ডাস্ট্রির ৯০ শতাংশই গরু চোর… শুভেন্দু-হিরণকে জবাব দেবের