কলকাতা: নির্বাচন চলাকালীন রাজ্য রাজনীতিতে আবারও ফিরল গরুপাচার মামলা। এবার বিজেপি-র নিশানায় তৃণমূলের তারকা সাংসদ দেব। এনামুল হকের সংস্থা থেকে দেব টাকা নিয়েছিলেন বলে একটি ডায়েরির পাতা প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, যাতে দেবের সংস্থা এবং দেবের নাম লেখা রয়েছে। ঘড়ি, মোবাইল বাবদ কত টাকা গিয়েছে, পাশাপাশি, ২৫ লক্ষ টাকা করে দু'বারে ৫০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়, তার হিসেব লেখা রয়েছে। সেই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেন্দুকে জবাব দিয়েছেন দেব। এবিপি আনন্দেও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন তিনি। (TMC MP Dev)


বৃহস্পতিবার সকালে শুভেন্দু অধিকারীর সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডল থেকে 'দেবের কীর্তি' শীর্ষক একটি পোস্ট করা হয়। ওই পোস্টে কিছু ডায়েরির পাতা তুলে ধরেন শুভেন্দু। একটি পোস্টে 'আরণ্যক ট্রেডার্স' নামর সংস্থার লেজার অ্যাকাউন্ট থেকে একটি সংস্থার অ্যাকউন্টে ২৫ লক্ষ টাকা করে ৫০ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে বলে দেখানো হয়। যে অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়েছে, সেটি পোস্টে ভাল ভাবে বোঝা না গেলেও, বিজেপি-র বিধায়ক তথা সাংসদ পদপ্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, 'দেব ভেঞ্চার্স প্রাইভেট লিমিটেড' নামের সংস্থার কাছে ওই টাকা গিয়েছে, যার মালিক দেব। আর 'আরণ্যক ট্রেডার্স' সংস্থার মালিক এনামুল হক, গরুপাচার মামলায় অভিযুক্ত যিনি। (Dev on Suvendu)


শুভেন্দুর পোস্ট করা নথি অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ওই ৫০ লক্ষ টাকা জমা করা হয়। অন্য নথিগুলিতে মোবাইল কিনতে ৭২ হাজার এবং ঘড়ি কিনতে ৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দেবকে দেওয়া হয়েছে  বলে লেখা রয়েছে। ব্যবসার প্রয়োজনে টাকা নিয়ে তা ফেরত দেওয়ার কথা যদিও মেনেছেন দেব। সেই নথিও তাঁর কাছে রয়েছে বলে জানান। তবে এনামুলকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি, তদন্তকারী সংস্থার হাতে থাকা নথি শুভেন্দুর হাতে পৌঁছল কী করে, সেই প্রশ্নও তোলেন। তবে শুভেন্দুকে ধন্যবাদই জানান দেব। আড়াই বছর ধরে যে কথাগুলি বলতে পারছিলেন না, আজ শুভেন্দু তাঁকে সেই সুযোগ করে দিয়েছেন বলে জানান তিনি। (Cattle Smuggling Case)



আরও পড়ুন: Suvendu Adhikari: 'দুই দফায় ৫০ লক্ষ টাকা নিয়েছেন দেব', ডায়েরির পাতা পোস্ট করে দাবি শুভেন্দুর


এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হয়ে দেব বলেন, "কাকে ধন্যবাদ দেব বুঝতে পারছি না, হিরণকে না শুভেন্দুদাকে, বুঝতে পারছি না। হিরণকে দিয়েই শুরু করি। আড়াই বছর ধরে মনের মধ্যে অনেক কথা জমে ছিল।  তদন্ত চলাকালীন বেশি কথা বলা যায় না। আমি খুব আশ্চর্য হলাম যে, সিবিআই-ইডি-র কাছ থেকে ওই নথি শুভেন্দু অধিকারীর কাছে কী করে পৌঁছল? ওই নথি ইডি, সিবিআই, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বা আদালতের কাছে থাকা উচিত। এর বাইরে কারও কাছে যাওয়া উচিত নয়। অর্থাৎ শুভেন্দু অধিকারীর সোর্স যে ভিতরে আছে, তা বোঝা গেল। টাকাটা আমি নিয়ে ফেরতও দিয়েছিলাম। সেই নথিও রয়েছে আমার কাছে। একটু পরই আপলোড করব।"



দেবের বিরুদ্ধে শুভেন্দু ওই পোস্ট করার পরই সতীর্থকে আক্রমণ করতে নেমে পড়েছেন হিরণ। এনামুলের থেকে দেব যে টাকা নিয়েছিলেন, তা প্রমাণ হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। দেব যদিও একটি ছবি পোস্ট করেছেন, যেখানে পিন্টু মণ্ডল নিবেদিত একটি অনুষ্ঠানে হিরণের উপস্থিতির বিজ্ঞাপন রয়েছে। তাই দেবের বক্তব্য, "যে পিন্টু মণ্ডলের কথা উঠছে, তাঁর নথি আমার কাছেও ছিল। কখনও আপলোড করিনি। আজ যিনি বিজেপি-র প্রার্থী, তিন বছর ধরে আমাকে গরু চোর বলে যাচ্ছেন। পিন্টু মণ্ডলের সঙ্গে নাকি আমার যোগাযোগ রয়েছে। উনিও তো পিন্টু মণ্ডলের সঙ্গে কাজ করেছেন, টাকা নিয়েছেন। আমার চেয়েও আগে থেকে জানাশোনা। তুমিও তো টাকা নিয়েছো? তাহলে তুমিও গরুচোর! আজ পর্যন্ত বলিনি। এটা আমার ভদ্রতা। কাদা ছুড়লে কত কষ্ট হয় জানি। শুভেন্দুদাই আমাকে সুযোগ করে দিলেনআমি যদি গরু চোর হই, তাহলে ইন্ডাস্ট্রির ৯০ শতাংশ অভিনেতাই গরু চোর। কারণ পিণ্ডু মণ্ডল বড় আয়োজক ছিলেন। টলিউড-বলিউডের অনেকেই ওঁর সঙ্গে কাজ করতেন। তাঁদের কাউকে কিন্তু ডাকা হয়নি। আমি তৃণমূলের সাংসদ বলে শুধু আমাকেই ডাকা হয়েছে। আড়াই বছর ধরে কষ্ট চেপে রেখেছিলাম। আজ মন খুলে কথা বলতে রলাম। শুভেন্দুদাই আমাকে সেই সুযোগ করে দিলেন।"


হিরণ যদিও নিজের অবস্থান থেকে সরছেন না। তাঁর দাবি, তিনি অভিযোগ তুলেছিলেন বলে, পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন দেব। হিরণ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে সিনেমা ছেড়ে দেবেন বলেছিলেন। তাই দেব কবে সিনেমা ছাড়ছেন, জানতে চেয়েছেন হিরণ।