ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, আবির ইসলাম, বোলপুর: রবীন্দ্রনাথের মূর্তি বসানোকে কেন্দ্র করে ফের বিতর্ক শান্তিনিকেতনে। 'ওয়র্ল্ড হেরিটেজ' ঘোষিত শান্তিনিকেতনের বাফার জোনে ১৫ ফুটের রবীন্দ্রমূর্তি বসিয়েছে বোলপুর পুরসভা, যাতে তীব্র আপত্তি জানাচ্ছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তাঁদের যুক্তি, ব্রাহ্ম আশ্রম হিসেবে পরিচিত শান্তিনিকেতনে মূর্তিপুজো হয় না। তাই মূর্তির বিরোধিতা করছেন তাঁরা। আর সেই নিয়েই নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। (Santiniketan News)


রবিবার রবীন্দ্রনাথের ওই মূর্তিটি উদ্বোধনের কথা ছিল রাজ্যের ক্ষুদ্র-মাঝারি ও কুটির শিল্প মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের। কিন্তু বিতর্কের জেরে আপাতত অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। সেই নিয়ে বিশ্বভারতীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বোলপুর পুরসভার আঝিকারিকরাও। আপাতত অনুষ্ঠান বাতিল করা হলেও, পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। (Bolpur News)


২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর UNESCO বিশ্বভারতীকে 'ওয়র্ল্ড হেরিটেজ' হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সম্প্রতি UNESCO-র সদস্যরা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষর সঙ্গে যৌথভাবে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের সীমানাও চিহ্নিত করেন৷ কিন্তু, দেখা গিয়েছে বিশ্বভারতী লাগোয়া কবিগুরু মার্কেটে শান্তিনিকেতন রাস্তার পাশে প্রায় ১৫ ফুট উচ্চতার একটি রবীন্দ্রমূর্তি বসিয়েছে বোলপুর পুরসভা৷ 


আরও পড়ুন: Rahool Mukherjee-Federation Conflict: 'আইন নেই তো কী? রুটি-রোজগারের অধিকার রয়েছে বইকি', টলিপাড়ার অচলাবস্থা নিয়ে এবার সরব টেকনিশিয়ানরা


কবিগুরু মার্কেট নিয়েও আপত্তি রয়েছে বিশ্বভারতীর। বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া ওই বাজারে প্রায় ৫০ টি দোকান রয়েছে। এর ফলে 'ওয়র্ল্ড হেরিটেজ' শান্তিনিকেতনের সৌন্দর্যায়নে কোপ পড়েছে বলে মত বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের। সেই নিয়ে ৭ জুলাই বীরভূমের জেলাশাসককে চিঠিও দিয়েছিলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।


এবার রবীন্দ্রমূর্তিটি নিয়ে বিরোধ বেধেছে। 'ওয়র্ল্ড হেরিটেজে'র বাফার জোনের ১০০ মিটারে কোর এরিয়ার মধ্যে কীভাবে রবীন্দ্রমূর্তিটি বসানো হল, প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এমনিতে বিশ্বভারতী চত্বরে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনও মূর্তি নেই। ব্রাহ্ম আদর্শে তৈরি শান্তিনিকেতন আশ্রম মূর্তিপুজো বা ব্যক্তিপুজোর বিরুদ্ধে। শান্তিনিকেতন আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে নিরাকার ব্রহ্ম উপাসনা শুরু করেছিলেন দেবেন্দ্রনাথ৷ পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন৷ দেশের আর পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতীর সংস্কৃতি, পঠন-পাঠন পদ্ধতি। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তাঁর মূর্তি থাকা তো দূর, রবীন্দ্রনাথের জন্ম বা মৃত্যুদিনে তাঁর চেয়ারে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান সকলে। ফলে মূর্তি ঘিরে বিবাদ দেখা দিয়েছে। 


যদিও বোলপুর পুরসভার চেয়ারপার্সন পর্ণা ঘোষ বলেন, "ওখানে আগে রবীন্দ্রনাথের ছোট একটি মূর্তি ছিল। শুধু আকার বাড়ানো হয়েছিল। বিশেষ কারণে আপাতত অনির্দিষ্ট কালের জন্য মূর্তি উন্মোচনের অনুষ্ঠান বাতিল করলাম। পরবর্তীতে দেখা যাবে।" মার্কেট কমিটির সভাপতি আমিনুল হুদা বলেন, "আমরা রাজ্য সরকারের জায়গায় রবীন্দ্রনাথকে সম্মান জানাতে মূর্তি বসিয়েছি, পুজো করতে নয়। বিশ্বভারতী বাফার জোনের মানচিত্র দেখাক।" যদিও বিশ্বভারতীর কর্মসচিব অশোক মাহাত বলেন, "শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী মূর্তিপুজো, ব্যক্তিপুজোর বিরোধী। আর এটি ওয়র্ল্ড হেরিটেজ বাফার জোনের ১০০ মিটার কোর এলাকার মধ্যে পড়ে। এখানে মূর্তি বসানো হয় কী করে?" ফলে রবীন্দ্রমূর্তিকে ঘিরে নতুন করে বিশ্বভারতীর সঙ্গে সংঘাত দেখা দিয়েছে রাজ্যের।