কলকাতা : সতী দেহ কাঁধে নিয়ে শিবের তাণ্ডব। আর চরাচরকে রক্ষা করতে সতীর দেহে বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রের আঘাত। যে সব জায়গায় সতীর দেহাংশ পড়েছিল, সেগুলিই এক-একটি সতীপীঠ। এই রাজ্যে যার সংখ্যা ১২।
কালীপীঠ, কালীঘাট: সতীর ৫১ পীঠের অন্যতম। কথিত আছে, মায়ের ডান পায়ের আঙুল পড়েছিল এখানে।
বীরভূম জেলার লাভপুরের ফুল্লরা মন্দির : আর এক সতীপীঠ। কথিত আছে, এখানে মায়ের গর্ভস্থ ফুল পড়েছিল। রামচন্দ্রের অকালবোধনের জন্য এখান থেকেই পদ্ম ফুল সংগ্রহ করেছিল হনুমান। দেবী মাকে এখানে ফুল্লরা নামে সম্বোধন করা হয়।
সতীপীঠ বক্রেশ্বর : কথিত আছে, মায়ের দুই ভ্রু-র মাঝের অংশ পড়েছিল এখানে। মন্দির সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে শ্মশান, অষ্টবক্র মুনির আশ্রম, উষ্ণ প্রয়েছে উষ্ণ প্রস্রবণ। মা এখানে সিংহবাহিনী। সারা বছরই এখানে পুজো হয়। কালীপুজোর দিন আলাদা পুজো হয় না। এটি শিব ক্ষেত্র হিসেবেও খ্যাত।
বীরভূম জেলার কঙ্কালীতলা মন্দির : কোপাই নদীর তিরে কঙ্কালীতলা মন্দির। এখানে মায়ের কাঁকাল অর্থাৎ কোমরের হাড় পড়েছিল বলে কথিত। এখানে রয়েছে একটি কুণ্ড। মায়ের স্নানজল হিসেবে ব্যবহার হয় কুণ্ডের জল।
সাঁইথিয়ার নন্দকিশোরী তলা : সতী পীঠের অন্যতম পীঠ সাঁইথিয়ার নন্দকিশোরী তলা। কথিত আছে, এখানে মায়ের গলার হার পড়েছিল। কালীপুজোর সময় এখানে আলাদা করে পুজো হয় না। সারা বছরই পূজিতা হন দেবী।
নলহাটির নলাটেশ্বরী মন্দির : ৫১ পীঠের অন্যতম নলহাটির নলাটেশ্বরী মন্দির। এখানে মায়ের গলার নলি পড়েছিল বলে শোনা যায়। পাহাড়ের ওপর তৈরি হয়েছে মন্দির।
আরও পড়ুন :
তারাপীঠে দেবী কী কী রূপে পূজিত হন দেবী? শনিবার জানুন মা তারাকে নিয়ে নানা বিশ্বাস-কথা
কেতুগ্রামের বাহুলা মন্দির : বর্ধমানের কেতুগ্রামের বাহুলা মন্দির সতীর ৫১ পীঠের অন্যতম। কথিত আছে, এখানে মায়ের বাম বাহু পড়েছিল। পতি-পুত্র নিয়ে পদ্মের উপর বিরাজমান মা। কোলে পুত্র অষ্টভুজ গণেশ।
মঙ্গলকোটের মা মঙ্গলচণ্ডী : বর্ধমানের উজানিতে মা মঙ্গলচণ্ডী রূপে পূজিতা। কথিত আছে, এখানে মায়ের কনুই পড়েছিল। কষ্টি পাথরে তৈরি মূর্তি। অন্ন ভোগের সঙ্গে এখানে প্রতিদিন মাকে মাছের ভোগ নিবেদন করা হয়। বর্ধমানের মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রামে যোগাদ্যা মন্দির।
মঙ্গলকোটের যোগাদ্যা মন্দির : ৫১ পীঠের অন্যতম এই স্থানে মায়ের ডান পায়ের বুড়ো আঙুল পড়েছিল। ভৈরব এখানে ক্ষীরেশ্বর।
নবগ্রামের কিরীটেশ্বরী মন্দির : ৫১ পীঠের অন্যতম মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের কিরীটেশ্বরী মন্দির। কথিত আছে, এই স্থানে মায়ের কিরীট বা মুকুট পড়েছিল। নাটোরের রানি ভবানী এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দিরের স্থাপত্যে আরবীয় সভ্যতার আদল। সাধারণ মানুষ বছরে মাত্র চারদিন এই পীঠে মায়ের আসল বিগ্রহ দর্শন করতে পারেন।
সাতকুড়ায় ভামরীদেবীর মন্দির : জলপাইগুড়ির মানিকগঞ্জের সাতকুড়ায় ভামরীদেবীর মন্দির। ৫১ পীঠের অন্যতম এই স্থানে সতী মায়ের বাঁ পায়ের অংশ পড়েছিল বলে কথিত। মা এখানে ভামরীদেবী হিসেবে পূজিতা হন। কালীপুজোর দিন সারারাত ঘরে চলে পুজো।
তমলুকের বর্গভীমা মন্দির: পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের বিভাস। ৫১ পীঠের অন্যতম। দেবী এখানে বর্গভীমা হিসেবে পূজিতা। কথিত আছে, এখানে মায়ের বাম গুল্ফ অর্থাৎ গোড়ালি পড়েছিল। ময়ূর বংশীয় রাজা তাম্রধ্বজ এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।