কলকাতা: দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে দেখা না গেলেও, সাংগঠনিক বৈঠকে নিজের অবস্থান বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। জানিয়ে দিয়েছেন, চার পাশে যতই হাঁকডাক হোক না কেন, তৃণমূলে এখনও তিনিই শেষ কথা। অভ্যন্তরীণ কলহে যখন দলে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, সেই সময় দলনেত্রীর এমন মন্তব্য কর্মীদের ভরসা জোগানোর পক্ষে যথেষ্ট বলে মনে করছেন তৃণমূল (TMC) সাংসদ সৌগত রায় (Saugata Roy)। কোনও রাখঢাক না করেই তিনি জানিয়েছেন যে, তৃণমূলে মমতার কোনও বিকল্প নেই।


অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee) নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশ্যে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণের পালা চলছিল তৃণমূল নেতাদের মধ্যে। সেই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল বৈঠকে দলের নেতা-নেত্রীদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘দল অহঙ্কার, বা গা জোয়ারি করার জায়গা নয়। দলের মধ্যে কেউ উপদল করার চেষ্টা করবেন না। অনেক কষ্টে দলটাকে তৈরি করেছি। কোনও মতেই অন্য কারও হাতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। যত দিন বাঁচব, এবং যে ভাবে দলটাকে তৈরি করে যাব, তাতে পরবর্তী চার-পাঁচ প্রজন্ম কাজ করতে পারবে।’’


এখন থেকে তিনি নিজেই সংগঠনের কাজ অনেকটা দেখবেন বলেও জানান তৃণমূল নেত্রী। তাঁর এই মন্তব্যই দলের কর্মীদদের আশা জোগাবে বলে মনে করছেন সৌগত। শনিবার এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংগঠন দেখবেন বললে তৃণমূল কর্মীরা ভরসা পান। দলটা উনি তৈরি করেছেন। ওঁর নামে দল চলে। সুতরাং উনি যে সংগঠনে যুক্ত রয়েছেন, এই বার্তা পেলে কর্মীরা যেমন আশ্বস্ত হন, তেমনই ভরসা পান মানুষও। দলে অন্য পদাধিকারী ছিলেন এবং আছেনও। কিন্তু তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও বিকল্প নেই।’’


আরও পড়ুন: Sisir Adhikari: শিশিরের সাংসদ পদ খারিজ নিয়ে সিদ্ধান্ত, তৃণমূলের আবেদন গেল প্রিভিলেজ কমিটির কাছে


অভিষেকের নেতৃত্ব নিয়ে সম্প্রতি টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল তৃণমূলে। সে প্রসঙ্গে সৌগত বলেন, ‘‘অভিষেক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। ত্রিপুরায় অনেকটা সময় দিয়েছে ও। গোয়াতেও সময় দিয়েছে। ফলে এখানে থেকে সমস্যাগুলো দেখার সময় কম ওর কাছে। অভিষেক অবশ্যই সংগঠন দেখবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছিল যে, ও না থাকলে কে দেখবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংগঠন দেখবেন বলায় কর্মীরা ভরসা পেয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল সংঘবদ্ধ।’’


মমতা ছাড়া অন্য কারও নেতৃত্ব মানতে বাধ্য নন বলে সম্প্রতি বিতর্ক উস্কে দিয়েছিলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং অলিখিত ভাবে তৃণমূলে মমতার উত্তরাধিকার বলে চিহ্নিত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশেই এমন মন্তব্য করেছিলেন কল্যাণ। পুরভোট পিছনো নিয়ে আদালতে মামলা চলাকালীন ভোট পিছনোর পক্ষে সওয়াল করায় অভিষেকের দায়িত্বজ্ঞান নিয়েই কার্যত প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি।  


তা নিয়ে জল অনেকদূর গড়ায়। প্রকাশ্যে কল্যাণকে বিঁধতে শুরু করেন কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh), অপরূপা পোদ্দাররা (Aparupa Poddar)। পদত্যাগের দাবি তোলার পাশাপাশি ‘ঘরশত্রু বিভীষণ’ বলেও কটাক্ষ করা হয় কল্যাণকে। এ নিয়ে মমতা বা অভিষেক কোনও মন্তব্য না করলেও, কালীঘাট থেকে অভিষেকের ভাই আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ও ‘শ্রীরামপুর নতুন সাংসদ চায়’ বলে দাবি জানাতে শুরু করেন। দলের তরফে বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও প্রকাশ্যে এই কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করা যায়নি।


সম্প্রতি দলের সাংগঠনিক বৈঠকে সেই নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশকারীদের কার্যতই সমঝে চলার নির্দেশ দেন মমতা। কোনও অভাব-অভিযোগ থাকলে, তা দলের অন্দরে জানাতে হবে। তা না করে প্রকাশ্যে দলের বিরুদ্ধে কোনও বিবৃতি দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেন তিনি।