কলকাতা: শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবারে মহাদেবকে জল নিবেদন করতে ইতিমধ্যেই ভক্তদের ভিড়। শ্রাবণ মাসে তারকেশ্বরে তারাকনাথের মাথায় জল ঢালতে হাজির হন হাজার হাজার মানুষ | পায়ে হেঁটে কাঁধে বাঁক নিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে উপস্থিত হন সকলে। হুগলির সব ঘাটে ঘাটে জলে জল ভরার প্রস্তুতি। অনেকে তারকেশ্বর যাওয়ার আগে দক্ষিণেশ্বর থেকে ঘটে জল ভরে নেন। অনেকে আবার বৈদ্যবাটীর নিমাইতীর্থ ঘাট থেকে জল ভরেন। 


বৈদ‍্যবাটীর নিমাইতীর্থঘাট খুবই পরিচিত, ষোড়শ শতাব্দীতে বিপ্রদাস তাঁর মনসা মঙ্গল কাব‍্যে এই ঘাটের কথা উল্লেখ করেন। স্বয়ং নিমাই সন্ন্যাস এসেছিলেন এই ঘাটে, এমনটি জানা যায়। জনশ্রুতি আছে তাঁর আগমনের সময় নিম গাছে চাঁপা ফুল ফুটেছিল। ভদ্রকালী মন্দির সংলগ্ন মিষ্টির দোকানে মিষ্টি খেয়ে পয়সার পরিবর্তে তিনি হাতের স্বর্ণবালা দিয়েছিলেন, এমনও লোককথা রয়েছে। 


নিমাই তীর্থ ঘাটের পুরনো ঘাটটি নষ্ট হয়ে গেলে চন্দননগরের স্বগীয় কাশীনাথ কুন্ডু মহাশয় উক্ত ঘাটটি সংস্কার করেন।এই ঘাটে ১৩৪৮ সালের দশম শতাব্দীর পাল রাজত্বকালের একটা সূর্য মূর্তি আবিষ্কার হয়। নিমাইঘাটে বছরে তিনটি মেলাও হত সেই সময়। কথিত আছে শ্রীমা সারদা দেবী জয়রামবাটী অথবা কামারপুকুর থেকে যখন দক্ষিণেশ্বর যেতেন তখন নিমাইতীর্থঘাট থেকে নৌকায় উঠতেন। নিমাইতীর্থ ঘাটটি মায়ের পদধূলিতে ধন্য। মধ্যযুগীয় মঙ্গলকাব্যে কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী চন্ডীমঙ্গল কাব্যে বৈদ্যবাটি নিমাই তীর্থঘাট এর উল্লেখ আছে। 


আরও পড়ুন, 'যে সর্বদা ইষ্ট চিন্তা করে, তার অনিষ্ট আসবে কোথা দিয়ে'? সন্তানদের উদ্দেশে মায়ের উক্তি যেন জীবনের পাথেয়


হুগলির বৈদ্যবাটির নিমাই তীর্থঘাট থেকেই বেশি ভাগ মানুষ কাঁধে জল নিয়ে রওনা হন বাবা তারানাথের মাথায় জল ঢালার জন্য | এমনিতে নিজের বা পরিবারের মঙ্গল কামনায় বর্তমানে সারা বছরই হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা তারকেশ্বরের মন্দিরে |এই তারকেশ্বর মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে জনশ্রুতি। নিমাই তীর্থ ঘাট ছাড়াও তারকেশ্বর মন্দিরের বাঁদিকে রয়েছে একটি পুকুর | যেটিকে সকলে দুধদুপুকুর বলে চেনে | সেই দুধদুপুকুরকে নিয়েও প্রচলিত রয়েছে নানা লোককথা ও বিশ্বাস | এখনও হাজার হাজার মহিলা সন্তান কামনায় বা সন্তানের মঙ্গল কামনায় তারকেশ্বর মন্দিরে ছুটে আসেন | মনস্কামনার জন্য মন্দিরের বিভিন্ন দিকে মানুষ ঢিল বেঁধে আসেন। 


শ্রাবণমাস জুড়েই ভক্তদের শিবলিঙ্গের ওপর জল ঢালার প্রথা চলতে থাকে। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পায়ে হেঁটে দূরদূরান্ত থেকে বাঁক কাঁধে নিয়ে মন্দিরে আসেন ভক্তগণ। বিশ্বাস যে, জলাভিষেকে সন্তুষ্ট হন তিনি। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, জল ভর্তি কলসির বাঁক কাঁধে নিয়ে যাত্রা শেষ করলে এবং মহাদেবকে জল অর্পণ করলে দেবাদিদেবের আশীর্বাদ পাওয়া যায়।