ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, শিবাশিস মৌলিক, কলকাতা : নিয়োগ দুর্নীতি  ( Bengal Recruitment Scam ) মামলায় গ্রেফতারির পর এবার তৃণমূলের যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ( Shantanu Banerjee )  বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন দলের পদাধিকারিরাই! তৃণমূলের বলাগড়ের ব্লক সভাপতির অভিযোগ, ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাস করেছিল শান্তনু! নিজের মনের মতো প্রার্থীদের জেতানোর জন্যই সন্ত্রাস করা হয়েছিল, দাবি ব্লকের সহ সভাপতির! 


বলাগড়ে তৃণমূল ( TMC )  ব্লক সহ সভাপতি তপন দাসের দাবি, ২০১৮-তে শান্তনু নিজের মনের মতো প্রার্থীকে জেতাবে বলে সন্ত্রাস করেছে।  একই সুরে বলাগড়ের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি নবীন গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ' শান্তনু সন্ত্রাস করেছে। এত প্রভাব ছিল ওর যে আমাদের কথা বলার জায়গা ছিল না।'


২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটে, রাজ্য়ের বিভিন্ন জেলা থেকে সামনে এসেছিল অশান্তির ছবি! এবার সেই সন্ত্রাসেও নাম জড়াল নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় ধৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের! তবে কোনও বিরোধী নেতা নয়, সেই অভিযোগ তুলেছেন, শান্তনুর দল তৃণমূলেরই পদাধিকারীরা!  ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্য জুড়ে ব্যাপক সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা। শান্তনু গ্রেফতার হওয়ার পরে, সেই সমস্ত বিষয় যেন মাটি ফুঁড়ে বাইরে আসতে শুরু করেছে! নিজে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেমন জয়ী হয়েছিলেন, তেমনই নিজের বাড়ির লোককেও জিতিয়েছিলেন! কিন্তু, কীভাবে? 

আরও পড়ুন :


পুরশুড়ায় বালি খাদানের নিয়ন্ত্রকও শান্তনু ! বিশাল তার দাপট, 'ভয়ে কাঁপতেন' স্থানীয়রা


তপন দাস জানালেন, ৪০-৫০ জনকে নিয়ে ঘুরত! আসাম রোডের ওপর বিজেপিকে যেভাবে মেরেছে, তার জন্য আমাদের রেজাল্ট খারাপ হয়েছে। ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে তারকেশ্বরের জেলা পরিষদের আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিলেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়! 
আর বলাগড়ের শ্রীপুর পঞ্চায়েত থেকে জিতিয়ে এনেছিলেন নিজের ভাইয়ের স্ত্রী-কে। সেবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্য জুড়ে ব্যাপক সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল, জায়গায় জায়গায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বিরোধীরা। রাজ্যের ৩৪ শতাংশ আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তৃণমূল! হুগলি-সহ রাজ্যের সবকটি জেলা পরিষদেও ছিল তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য!


বলাগড়ের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি নবীন গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, 'বিরোধীদের নমিনেশন করতে দিল না। বলাগড়ে ওর জন্যই বিজেপি প্রাধান্য পেল। শান্তনুর জন্য। যার জন্য রত্না দির মতো নেত্রী এখানে হেরে গেছেন।' 


শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পরে, তাঁর কীর্তিকলাপ নিয়ে বলাগড়ের তৃণমূলের নেতৃত্বই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন! এখানেই বিরোধীদের প্রশ্ন, ৫ বছর আগে যখন গ্রামবাংলার ভোট ব্যাপক সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল, তখন কেন চুপ ছিলেন তাঁরা?


তৃণমূলের ছাত্র পরিষদ নেতা থেকে ধীরে ধীরে হুগলির রাজনীতিতে নিজের প্রভাব বিস্তার করা, কীভাবে, কোন পথে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থান - তা নিয়েই যথেষ্ট কৌতুহল রয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। এবার তাঁকে নিয়ে তদন্তে কী কী তথ্য় উঠে আসে, সেটাই দেখার।