সুদীপ চক্রবর্তী, উত্তর দিনাজপুর: মেয়ের ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে নার্স হবে। কিন্তু, সে স্বপ্ন আর পূরণ হল না। অকালে ঝরে গেছে প্রাণ। উচ্চ মাধ্যমিকে মেয়ের পাস করার খবরে শুধুই আক্ষেপ করছেন মেয়েকে হারানোর যন্ত্রণা বয়ে বেড়ানোর কালিয়াগঞ্জের নির্যাতিতার বাবা-মা।  


করোনাকালে দিতে হয়নি মাধ্যমিক। সেই অর্থে, জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা উচ্চমাধ্যমিক। সেই পরীক্ষায় সফল। কিন্তু, সেই সাফল্য উপভোগ করবে কে? বুধবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হয়েছে। মার্কশিটে জ্বল জ্বল করছে প্রাপ্ত নম্বর। ২৪৩ নম্বর পেয়ে পাস করেছে মেয়ে। 


তবে যার নামের পাশে বসানো আছে এই নম্বর, জীবনের সব অঙ্ক মেলার আগেই বিদায় নিযেছে সে। প্রাপ্ত নম্বর দেখে মেয়ের পাস করার আনন্দ নেই। যন্ত্রণায় বুক ফেটে যাচ্ছে কালিয়াগঞ্জের নিহত নাবালিকার বাবা-মায়ের। ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভাল ছিল মৃত নাবালিকা। বড় হয়ে নার্স হতে চেয়েছিল। ইচ্ছে ছিল অন্যদের সুশ্রূষা করবে। কিন্তু, সেই স্বপ্ন আর পূরণ হল না। অকালেই ঝরে গেল ছোট্ট প্রাণ। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছিল মেয়ে। কিন্তু, তা আর হল না, আক্ষেপ নিহত নাবালিকার মায়ের। 


মৃত নাবালিকার মা বলেছেন, 'মেয়ে পড়াশোনায় খুবই ভালো ছিল। ইচ্ছে ছিল মানুষের মতো মানুষ হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। মেয়ের ইচ্ছে ছিল যে সে একজন নার্স হবে। উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট দেখে খুবই দুঃখ হচ্ছে, যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আফসোস সেই আশা আর পূর্ণ হল না। যদি আজ মেয়ে বেঁচে থাকতো তাহলে রেজাল্ট দেখে কত আনন্দ পেত। দোষীদের চরম শাস্তি চাই। সিবিআই তদন্ত চাই।


পড়াশোনার সঙ্গে খেলাধূলাতেও ভাল ছিল মৃত নির্যাতিতা। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরনোর পর বাকরুদ্ধ স্কুলের শিক্ষকরাও। স্কুল শিক্ষকের কথায়, মেয়েটি ভাল রেজাল্ট করেছে। ক্লাস ফাইভ থেকেই ভাল ছাত্রী ছিল। খেলাধূলাতেও ভালো ছিল। মেয়েটি আজ নেই, খুব খারাপ লাগছে। আমরা বাকরুদ্ধ।


কালিয়াগঞ্জে নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে তোলপাড় হয় গোটা রাজ্য। দফায় দফায় বিক্ষোভ, ভাঙচুরে অগ্নিগর্ভ হয় ওঠে সাহেবঘাটা। এখন শান্ত গ্রাম। শুধু ছোট্ট মেয়েকে অকালে হারানোর যন্ত্রণা বুকে বয়ে বেড়াচ্ছেন বাবা-মা। এখন তাঁদের একটাই দাবি, সিবিআই তদন্ত, দোষীদের শাস্তি। আর ফিরবে না মেয়ে। তবে দোষীরা শাস্তি পেলে হয়তো কিছুটা জুড়োবে জ্বালা। হাইকোর্টের নির্দেশে নাবালিকার মৃত্যুর তদন্তে সিট গঠন হয়েছে। দোষীদের শাস্তির অপেক্ষায় দিন গুণছেন মেয়েকে হারানো বাবা-মা।