কলকাতা: সালটা ছিল ২০২২। দুর্গা পুজো গিয়েছে সবে। উমা বিদায়ে নয়, সন্তানকে নতুন জামা কিনে দিতে পারেনি বলে সেবার চোখ ভিজেছিল অনেক চাকরি প্রার্থীদেরই। বাইশের নভেম্বরে, চাকরির দাবিতে ক্যামাকস্ট্রিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল, সেদিন টেট চাকরি প্রার্থীরা (Primary Tet Candidate Agitation) । আর সেই আন্দোলনকারীদের মধ্যেই ছিলেন অরুণিমা পালও (Arunima Pal)। চাকরি চাইতে গিয়ে, উল্টে পুলিশের কামড় জুটেছিল সেদিন অরুণিমা পালের। চাকরি প্রার্থীদের আন্দোলনের মাঝে ঘটে যাওয়া সেই বিতর্কিত ঘটনাটা আজও কেউ ভোলেনি। বছর পেরিয়ে ২০২৩। আরও একবার কাশফুল ফোটার আগেই, এবার সেই অরুণিমা পালকেই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ দিল কমিশন (State Human Rights Commission)।


 ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গিয়েছিল সেই দুপুরে


জানা গিয়েছে, অরুণিমা পালকে ৩০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ দিয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। তিন সপ্তাহের মধ্যে মুখ্যসচিবের কাছে চাওয়া হয়েছে অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট। 'পুলিশের রিপোর্টে সন্তুষ্ট নয়' বলে জানিয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। পাশাপাশি আরও একটা বিষয়ে কমিশনের তরফে সুপারিশ করা হয়েছে। মূলত বিক্ষোভে গ্রেফতার হওয়া চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে পুরুষ ও মহিলা উভয়েই থাকেন। এদিকে লালবাজারে রয়েছে একটি মাত্র লকাপ। যাতে কোনওপ্রকার অস্বস্তিকর বা অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তাই লালবাজারে আরও একটি পৃথক লকাপ তৈরি করা হয়, এনিয়েও সুপারিশ করেছে কমিশন। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের নভেম্বরে সেদিন. চাকরির দাবি অরুণিমা-সহ বহু চাকরি প্রার্থীরাই আন্দোলনে নেমেছিলেন। ক্যামাকস্ট্রিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের  অফিসের সামনে চলছিল বিক্ষোভ। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে এলাকায় পৌঁছেছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। অভিযোগ উঠেছিল, ওই চাকরিপ্রার্থীদের সেদিন টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তুলেছিল পুলিশ। কিন্তু গ্রেফতারির মাঝে আচমকাই একটা ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গিয়েছিল সেই দুপুরে। 


জামিন অযোগ্য ধারায় অরুণিমা-সহ বাকি চাকরিপ্রার্থীদের গ্রেফতার করেছিল পুলিশ


আচমকাই পুলিশের কামড় খেয়েছিলেন অরুণিমা পাল। এদিকে উল্টে সেদিন ওই চাকরি প্রার্থীকেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। দেওয়া হয়েছিল, তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারা। কিন্তু ক্যামেরার সামনে যে পুলিশ কর্মীকে কামড়াতে দেখা গিয়েছিল, তা নিয়ে অন্য যুক্তি ছিল প্রশাসনের। পুলিশের তরফে অরুণিমাকে গ্রেফতারির পর দাবি করা হয়েছিল, ওই আন্দোলনকারীও পুলিশের হাতে কামড়ে দিয়েছেন। কিন্তু বাধ সাধল আন্দোলনকারীদের রেকর্ডেড একটি ভিডিও। যেখানে দেখা গিয়েছিল, কামড়ানোর আগেও, ওই চাকরি প্রার্থীকে 'নিগ্রহ' করেছিল পুলিশ। অরুণিমার হাতে যে মানুষের কামড়েরই চিহ্ন ছিল, সেই দাবিকে মান্যতা দিয়েছিল খোদ রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল।


আরও পড়ুন, বৃষ্টি বাড়বে মাসের শেষে, আগামী ৪৮ ঘণ্টা ফের ভিজবে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ


 আমরা ক্রিমিনাল নই, সেটা আবার প্রমাণিত হল : অরুণিমা


জামিন অযোগ্য ধারায় সেদিন অরুণিমা-সহ বাকি চাকরিপ্রার্থীদের গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরে ব্যাঙ্কশাল আদালত থেকে শেষ পর্যন্ত জামিনে মুক্তি পেয়ে গিয়েছিলেন প্রত্য়েকেই। মুক্তি পেয়ে সেবার অরুণিমা বলেছিলেন, 'আমরা ক্রিমিনাল নই, সেটা আবার প্রমাণিত হল।'