কলকাতা: বাংলার নানা কোণে বটগাছের চারা রোপণ করেছেন। কখনও রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলায় বৃক্ষরোপণ করেছেন। কখনও আবার জঙ্গলমহলে, কখনও আবার কলকাতা শহরে বটগাছের চারা রোপণ করেছেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল, এই কাজ শুধু দেশেই সীমাবদ্ধ রাখবেন না। পড়শি দেশেও যাবেন। তাই পুজোর আগে তিনি যাচ্ছেন নেপাল-ভুটান। এমনটাই জানালেন পেশায় শিক্ষক এবং নেশার বৃক্ষরোপণকারী শ্যামল জানা। তবে বিদেশের মাটিতে বৃক্ষরোপণ শুরু হয়েছে কয়েকদিন আগেই। সম্প্রতি বাংলাদেশের মাটিতে বৃক্ষরোপণ করে এলেন তিনি।
বাংলাদেশের (Bangladesh) জয়পুরহাট জেলায় গিয়েছিলেন শ্যামল জানা (Shyamal Jana)। সেখানে বটগাছের (Banyan Tree) চারা রোপণ করেন তিনি। মেদিনীপুরের এই শিক্ষক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান শুধুমাত্র বৃক্ষরোপণের বার্তা দিতে। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি বর্ডার দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন শ্যামলবাবু। একদিকে বৃক্ষরোপণ, অন্যদিকে শান্তির বার্তা- এই ভাবনা নিয়েই ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী বৃক্ষরোপণ-এর জন্য বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলায় পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। জয়পুরহাট-এর জেলা প্রশাসনের মূল ভবনের পিছনে একটি বট বৃক্ষের চারা রোপণ করে শ্যামল জানা। উপস্থিত ছিলেন করেন জয়পুরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ জাহাঙ্গির আলম, 'দেশীয় গাছ ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ আন্দোলন'-এর উদ্যোক্তা- কৃষিবিদ রতন মণ্ডল, লোকসঙ্গীত শিল্পী তামান্না ইয়াসমিন, কবি শামিম নাজির, অধ্যাপক অচিন্ত্য কুণ্ড, কবি যতন দেবনাথ, শিক্ষক সুফিয়া সুলতানা, আব্দুল আলিম সরদার, মুক্তিযুদ্ধে জয়পুহাটের অন্যতম সংগঠক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রাজা চৌধুরী, নাট্যকর্মী দীলিপ সেন, বিশিষ্ট ছড়াকার মুস্তাফা আনসারি, একুশে আবৃত্তি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লালন হোসেন-সহ অনেকেই। ছোট্ট অনুষ্ঠানে বক্তব্যও রাখেন জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক জনাব সালেহীন তানভীর গাজী। বৃক্ষরোপণের কাজ করার জন্য শ্যামল জানাকে অশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। গোটা পৃথিবীতেই গাছ না কেটে উন্নয়নের পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে জানান তিনি। যে কোনও দেশে বৃক্ষরোপণই মানবসভ্যতার জন্য প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। জয়পুরহাট জেলার প্রশাসক শ্যামল জানার হাতে স্মারক ও মানপত্র তুলে দেন।
শ্যামল জানা জানাচ্ছেন তাঁর স্লোগান মূলত ২টি। একটি হল 'থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে বৃক্ষরোপণ বিশ্বজুড়ে', অন্যটি 'সারা পৃথিবী আমার নিজের বাগান'। জলবায়ু সঙ্কটের মোকাবিলা করার একমাত্র উপায় বৃক্ষরোপণ, এই বার্তা দিতেই তাঁর এমন কাজ বলে জানান তিনি। একা কোনও ব্য়ক্তি বা দেশ এই কাজ করতে পারবে না। সামগ্রিক চেতনা তৈরির পক্ষে সওয়াল করেন কাঁথির এই শিক্ষক। তাঁর স্বপ্ন মোট ৫০০০টি বটবৃক্ষ রোপণ করবেন। জয়পুরহাটে ৮৪১তম বটগাছ রোপণ করলেন বলে জানালেন তিনি। সেদিনই, জয়পুরহাটে বারো শিবালয় মন্দির প্রাঙ্গণে আরও একটি বটগাছের চারা রোপণ করেছেন শ্যামল জানা।
যাতায়াত-থাকা-খাওয়া- এই খরচের অনেকটা নিজের বেতন থেকে জমানো টাকায় খরচ করেছেন শ্যামল জানা। আর অনেক চেনা-অচেনা ব্যক্তিকে পেয়েছেন পাশে, জানাচ্ছেন শ্যামল জানা। কেউ ট্রেনের টিকিট কেটে দিয়েছেন, কেউ রাতে বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন, কেউ আবার বাংলাদেশে ঘোরার জন্য কিছু খরচ দিয়েছেন।
আপাতত নেপাল-ভুটানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন শ্যামলবাবু। পুজোয় অবশ্য বাড়িতেই থাকার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। আপাতত পুজোর সপ্তাহখানেক আগে ২ দেশে বৃক্ষরোপণ করে আসার স্বপ্ন তাঁর।
আরও পড়ুন: আজ রাতেই পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে চিরবিদায়, সূর্যের পথে যাত্রা সৌরযানের