সোমনাথ মিত্র, কলকাতা: সিঙ্গুরে চাষের অযোগ্য জমিকে চাষের উপযোগী করতে সাত দফা দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ সিঙ্গুর বন্ধ্যা জমি পুর্নব্যবহার কমিটি। শুক্রবার দাবিপত্র নিয়ে নবান্নে যান কমিটির সদস্যরা। কিন্তু সেখানে মমতার হাতে দাবিপত্র তুলে দিতে না পেরে, ইমেল করেন তাঁরা। (Singur Land Controversy)


২০১৬ সালের অগাস্ট মাসে সিঙ্গুরের জমি অধিগ্ৰহণকে বেআইনি ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। প্রায় ১ হাজার একর জমি চাষযোগ্য করে কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। সেই রায়ের পরে আট বছর পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও সিঙ্গুরের বেশিরভাগ জমি
চায়ের অযোগ্য বলে দাবি তৎকালীন জমি আন্দোলনকারী কৃষকদের একাংশের। (Mamata Banerjee)

এই কৃষকদের মধ্যে ২১ জনকে নিয়ে গঠিত হয়েছে সিঙ্গুর বন্ধ্যা জমি পুর্নব্যবহার কমিটি। সিঙ্গুরের জমি ফের চাষ যোগ্য করে তুলতে রাজ্য সরকারের কাছে সাত দফা দাবি তুলে ধরেছেন তাঁরা। সিঙ্গুর বন্ধ্যা জমি পুনর্ব্যবহার কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক দুধকুমার ধাড়া বলেন, "জমি ব্যবহার হয় তিনটি কাজে, হয় চাষ, না হয় বাস, নইলে শিল্প। সিঙ্গুরের জমিতে চাষও হচ্ছে না, বাসও হচ্ছে না, আর শিল্পও হচ্ছে না। এখন এটাই বাস্তব। চাষ হচ্ছে শুধুমাত্র ৩০০ একরে। বাকি জমিটা যাতে ব্যবহারযোগ্য করা যায়, তার জন্যই সিঙ্গুরে বন্ধ্যা জমি পুনর্ব্যবহার কমিটি তৈরি হয়েছে।"


সিঙ্গুরের কৃষকদের একাংশের মূল দাবিগুলি হল-



  • চাষের অযোগ্য জমিকে চাষের উপযোগী করতে হবে।

  • ঠিক করতে হবে জমির নিকাশি ব্যবস্থা।

  • অধিগ্রহণের আগে জমিতে কৃষকদের যা অধিকার ছিল, সেই অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।

  • অধিগৃহিত জমির ১০০ একরে যে ছোট শিল্প ছিল সেগুলি ফিরিয়ে আনতে হবে।

  • অধিগৃহীত জমি চাষ যোগ্য না করা গেলে সেখানে কারখানা করতে হবে।


সব মিলিয়ে সাত দফা দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন সিঙ্গুর বন্ধ্যা জমি পুর্নব্যবহার কমিটির সদস্যেরা। শুক্রবার দাবিপত্র জমি দিতে নবান্নে যান তাঁরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে দাবিপত্র তুলে দিতে না পেরে মুখ্যমন্ত্রীকে ইমেল করেন তাঁরা। সিঙ্গুর বন্ধ্যা জমি পুর্নব্যবহার কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মহাদেব দাস বলেন, "আগামী প্রজন্ম বড় হচ্ছে। তারা জানতে চাইবে, তোমরা আন্দোলন করেছিলে। কিন্তু সেই জমিতে চাষও হল না, শিল্পও হল না। তাহলে আমাদের কী লাভ হল? সেই ভেবেই, যিনি সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, তাঁর কাছএ একাধিক দাবি লিখিত আকারে পেশ করেছি।"

হয় চাষ, নয় শিল্পের দাবি, সিঙ্গুরে সরব কৃষকদের একাংশ। আর সেই নিয়েই সিঙ্গুরে রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে। সিঙ্গুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি আনন্দমোহন ঘোষ বলেন, "সিঙ্গুর বন্ধ্যা জমি পুনর্ব্যবহার কমিটির সদস্যদের দাবি ঠিক নয়। নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে এই সব বলছে। সিঙ্গুরের ৯০ শতাংশ জমিতেই চাষ হয়। বাইরে থাকেন কিছু জমির মালিক। শুধু তাঁদের জমিতে চাষ হয় না।"


এ নিয়ে হুগলি জেলায় সিপিএম-এর সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, "শাসকদলের পক্ষ থেকে যা বলা হচ্ছে, সব মিথ্যে। কারণ এই বিতর্কের অবসান ঘটাতে সরকারের উদ্যোগে সিঙ্গুরের জমিতে নতুন করে সার্ভে হোক। আমরা নিশ্চিত, অধিগৃহীত ৭০০ একর জমিতে চাষ হচ্ছে না। প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে মিথ্যাচার করছে শাসকদল।"

২০০৬ সালে সিঙ্গুরে টাটা মোটর গাড়ি কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে আন্দোলন গড়ে ওঠে । কৃষকদের আন্দোলনের ফলে কারখানার কাজ প্রায় সমাপ্ত হয়ে যাওয়ার পরেও ফিরে যেতে বাধ্য হয় টাটারা। জমি চাষ যোগ্য না হলে ফের সেই শিল্পই চাইছে ২০২৪ সালের সিঙ্গুর।