সৌভিক মজুমদার, কলকাতা : সিঙ্গুরের বেড়াবেড়ির ১৩ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের, ভোট বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বালি-জগাছায় পুনর্নির্বাচনের আর্জি খারিজ করে দিলেন বিচারপতি অমৃতা সিন্হা। এদিন, মামলাকারী আদালতে উপস্থিত না থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি।


পঞ্চায়েত ভোট মিটেছে প্রায় ২ মাস হতে চলল। কিন্তু, সেই ভোটগ্রহণ ও গণনাকে কেন্দ্র করে যে ভুরিভুরি অভিযোগ উঠেছে, বহু ক্ষেত্রেই তার নিষ্পত্তি হয়নি এখনও। এই প্রেক্ষাপটে, হুগলির সিঙ্গুরের বেড়াবেড়ির ১৩ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের, ভোট বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। 


পাশাপাশি, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বালি-জগাছায় পুনর্নির্বাচনের আর্জি খারিজ করে দিলেন বিচারপতি অমৃতা সিন্হা। ভোট গণনার দিন অর্থাৎ ১১ জুলাই,সিঙ্গুরের এই নেতাজি জয়ন্তী পাঠাগারে, বেড়াবেড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৩ নম্বর সংসদের ভোট গণনা হয়। 


তৃণমূলের বিরুদ্ধে ব্যালট লুঠের অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। ফলে স্থগিত হয়ে যায় গণনা। ওই বুথে ফের ভোটের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সেই মামলায় শনিবার, বিচারপতি অমৃতা সিন্হা প্রশ্ন করেন,সিঙ্গুরের বেড়াবেড়ি ১৩ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের নেতাজি জয়ন্তী পাঠাগার গণনা কেন্দ্রের ছিনতাই হওয়া ব্যালট কার? কোন দলের প্রার্থী গণনার বাক্স থেকে ছিনতাই হয়েছিল? 


ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সেটা নিশ্চিত করা গেলে ভোটের নির্দিষ্ট ফলাফল জানা যাবে। বিচারপতি অমৃতা সিন্হা বলেন, ভোট বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় কমিশন সিসিক্যামেরার ফুটেজ দেখেনি। 


এরপর, সিঙ্গুরের বেড়াবেড়ি ১৩ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভোট বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনরায় বিবেচনা করার জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেন তিনি। বিচারপতি সিন্হা নির্দেশ দেন, যদি দেখা যায় মামলাকারীর বাক্স থেকে ছিনতাই হয়েছে, তাহলে রাজ্য নির্বাচন কমিশন নতুন নির্দেশিকাও জারি করতে পারে।


এই মামলায় ৩ সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে পুনর্বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। অন্যদিকে, পঞ্চায়েত ভোট গণনার দিন, হাওড়ার বালি-জগাছার অভয়নগর-দুর্গাপুর ২ নম্বর পঞ্চায়েত এলাকার পল্লিমঙ্গল বিদ্যামন্দিরের গণনাকেন্দ্রের বাইরে ব্যালট উদ্ধারকে কেন্দ্র করে তুলকালাম বাধে! 


সিপিএম দাবি করে, সেই ব্যালটগুলিতে তাদের প্রার্থীকেই ভোট দেওয়া হয়েছিল! সিপিএম কর্মীদের মারধরের অভিযোগও ওঠে। ওই কেন্দ্রে তৃণমূল জয়ী হলেও, ব্যালট-বিতর্কে হাইকোর্টে মামলা করেন সিপিএমের জগাছা উত্তর এরিয়া কমিটির সম্পাদক দেবীপ্রসাদ ভৌমিক। 


১৩ জুলাই কলকাতা হাইকোর্টে হাজিরা দিয়ে, বিচারপতির প্রশ্নের জবাবে চাঞ্চল্য়কর স্বীকারোক্তি করেন হাওড়ার বালি-জগাছা ব্লকের বিডিও পারমিতা ঘোষ। তিনি বলেন, গণনার সময় ব্যালট ছিনতাই করা হয়েছিল! তাই গণনাকেন্দ্রের বাইরে গিয়েছিল ব্যালট! সব পক্ষের সওয়াল জবাব শুনে গণনাকেন্দ্রের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ, হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি অমৃতা সিন্হা।


শনিবার, সেই সিসিটিভি ফুটেজ এজলাসে বসে দেখেন বিচারপতি। তারপরই, এদিন মামলা খারিজ করল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালত জানাল, অশান্তির কিছু ছবি ধরা পড়লেও এর ভিত্তিতে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দেওয়া সম্ভব নয়। পুলিশ তার তদন্ত চালিয়ে নিয়ে যাবে।  এদিন, মামলাকারী আদালতে উপস্থিত না থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি।