শুভেন্দু ভট্টাচার্য, শীতলকুচি : গোটা বিশ্ব তথা রাজ্যেও করোনা পরিস্থিতি চলছে। মারণ ভাইরাসের জেরে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রাজ্যের স্কুল। স্কুল বন্ধ থাকায় ক্ষতি হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায়। আর তাই, বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের টিউশনির ব্যবস্থা করেছেন শীতলকুচি (Sitalkuchi) জোরপাটকি হাইস্কুলের শিক্ষক জীবন বসাক। 


স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছিল ছাত্র-ছাত্রীদের। তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে শিক্ষাদানের বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন শিক্ষক জীবন বসাক।  ছাত্র-ছাত্রীদের কথা ভেবে প্রায় ছ'মাস ধরে তিনি বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে তাদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করছেন। শুধু তাই নয়, ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি গিয়েও পড়াচ্ছেন তিনি। মাস্টারমশাইয়ের এই উদ্যোগে খুবই খুশি অভিভাবকেরা। সপ্তাহে দু থেকে তিনদিন তিনি বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে।


করোনা পরিস্থিতিতে যখন স্কুল বন্ধ, তখন রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে পড়াশোনার আওতা থেকে দূরে চলে না যায়, সেজন্য একেকজন শিক্ষকের একেক রকম ভূমিকা উঠে আসছে। কোথাও দরিদ্র শিশুরা, যাদের পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। নেই কোনও অনলাইন শিক্ষার ব্যবস্থা। সেখানে শিক্ষকের ভূমিকায় নেমে পড়েছেন ট্রাফিক পুলিশরা। প্রত্যেকদিন রোদ, ঝড়, বৃষ্টি উপেক্ষা করে ট্রাফিক সামলানোর পর তাঁরা হয়ে উঠছেন শিক্ষক। খোলা আকাশের নিচে গরিব শিশুদের শিক্ষাদানই তখন তাঁদের একমাত্র দায়িত্ব। নিজেরাই নিজেদের টাকায় তাদের কিনে দিচ্ছেন বই, খাতা, পেন পেনসিল। শিশুদের মন ভালো রাখতে দিচ্ছেন চকোলেট, লজেন্সও। আবার কোথাও হতদরিদ্র পরিবারে যখন কেউই শিক্ষার আলো দেখেনি। সেখানে মাটির বাড়ির দেওয়ালকেই কার্যত ব্ল্যাকবোর্ড বানিয়ে সেখানেই শিক্ষাদান করছেন শিক্ষক। তার সঙ্গে চলছে কুসংস্কার দূর করার জন্য বিজ্ঞান চেতনার প্রসার ঘটানোর কাজও। কেন ভ্যাকসিন নেওয়া প্রয়োজন, ম্যালেরিয়া যে জীবানুর মাধ্যমে হয়, তা কোনও ভূতে ধরা কিংবা দূষিত বাতাস ঘটিত রোগ নয়, তা হাতে কলমে মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে বোঝাচ্ছেন তিনি। প্রত্যেকেরই লক্ষ একটাই। রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীরা যেন পড়াশোনা থেকে দূরে না থাকে। শিক্ষার অধিকার প্রত্যেকের। স্কুল বন্ধ থাকলেও পড়াশোনা বা শিক্ষাদান যেন থেমে না থাকে, তারই নজির গড়ছেন শিক্ষকরা। ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মদিনে উদযাপিত শিক্ষক দিবসে এমন সমস্ত শিক্ষকদের কুর্নিশ।