জয়নগর : 'পুলিশ কেন কাল এফআইআর করেনি ?' তৃণমূল সাংসদ প্রতিমা মণ্ডলের মুখোমুখি হয়ে প্রশ্ন তুললেন বিজেপি বিধায়িকা অগ্নিমিত্রা পাল। দুপুরে জয়নগরের নিহত বালিকার দেহ সংরক্ষণের দাবিতে হাসপাতালে যান অগ্নিমিত্রা। তৃণমূল সাংসদ প্রতিমা মণ্ডলও পৌঁছন সেখানে। সাংসদের সামনেই দেহ সংরক্ষণের দাবি জানান অগ্নিমিত্রা। তৃণমূল সাংসদকে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়, ওঠে 'গো ব্যাক' স্লোগানও।


তৃণমূল সাংসদকে ভিড়ের মধ্যেই অগ্নিমিত্রা বলতে থাকেন, 'আমরা চাই, দেহ সংরক্ষণ করা হোক। আরজি করেও আমরা বারবার বলেছিলাম দেহ সংরক্ষণ করতে। পুলিশ আমাদের কথা শোনেনি। নিরপেক্ষ হাসপাতালে থেকে ময়নাতদন্ত করাতে হবে। আরজি করে যেটা করতে দেয়নি। আপনি এমপি, আপনার কাছে প্রশ্ন, পুলিশের কাছে বাবা-মা বারবার গেছেন।' সেই সময় প্রতিমা মণ্ডল অগ্নিমিত্রাকে বলেন, 'আপনি যেমন আমার সঙ্গে কথা বললেন। আমিও বাবা-মার সঙ্গে কথা বলতে চাই। ওঁরা এই মুহূর্তে কী চান ?' অগ্নিমিত্রা তাঁকে বলেন, বাবা বডি প্রিজার্ভ করতে চান। আর আপনি যাবেন না দিদি। ওঁরা আপনাকে যেতে দেবেন না। আপনি একজন জনপ্রতিনিধি। আমিও জনপ্রতিনিধি। সুতরাং, আপনি থাকবেন এখানে।' তখন এবিপি আনন্দের প্রতিনিধি তৃণমূল সাংসদকে 'গো ব্যাক' স্লোগান নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, 'আমি গো ব্যাকের কথা ভেবে আসিনি তো। গো ব্যাক তো বলবেই। সেই ভেবে আসিনি। আমি এখানে জনপ্রতিনিধি হিসাবে এসেছি।' অগ্নিমিত্রা এর পর তাঁকে প্রশ্ন করেন, 'পুলিশ কেন কাল এফআইআর করেনি। আপনি তো পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। ' এই ঘটনা নিয়ে এক্স হ্যান্ডেলেও পোস্ট করেন অগ্নিমিত্রা। তিনি লেখেন, 'জয়নগরে ধর্ষণ-খুন এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা সমাজের গভীর সঙ্কটকেই তুলে ধরছে। সাধারণ মানুষ আর চুপ করে থাকতে রাজি নয়। তাই মহিলারা ঝাঁটা হাতে রাস্তায় নেমেছে। বোঝাই যাচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার মানবাধিকার রক্ষায় ব্যর্থ। এই ভয়ঙ্কর ঘটনার পরেও প্রশাসন যদি ঘুমিয়ে থাকে, তবে এর বিরুদ্ধে আমাদের জেগে উঠতে হবে। নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে নিজেদেরই সরব হতে হবে। সকলের জন্য ন্যায়বিচার চেয়ে আমাদের আন্দোলন চলবে।'  


৯ বছরের বালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ঘিরে অগ্নিগর্ভ জয়নগরের মহিষমারি এলাকা। ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন গ্রামবাসী। তাঁদের দাবি, চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী গতকাল টিউশন থেকে না ফেরায়, সন্ধেয় জয়নগর থানায় অভিযোগ জানাতে যায় পরিবার। অভিযোগ, পুলিশ বিষয়টিতে গুরুত্বই দেয়নি। রাতে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে জলাজমিতে মেলে ৯ বছরের বালিকার দেহ। তখন টনক নড়ে পুলিশের। ক্ষুব্ধ জনতার দাবি, পুলিশ সেই সময় তৎপর হলে প্রাণে বেঁচে যেত নাবালিকা।


পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলেন স্থানীয়রা। দক্ষিণ বারাসাত থেকে মহিষমারি যাওয়ার রাস্তা অবরোধ, পুলিশকে ধাওয়া করে ঝাঁটাপেটা করেন মহিলারা। মহিষমারি পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। ফাঁড়ির বাইরে মোটরবাইক, সাইকেলে আগুন, প্রাণভয়ে লুকিয়ে পড়েন পুলিশ কর্মীরা। ফিরে যেতে হয় র‍্যাফকে। বারুইপুরের SDPO অতীশ বিশ্বাসকে লাঠি হাতে তাড়া করেন স্থানীয়রা। পরিস্থিতি সামাল দিতে জয়নগর থানা থেকে বিশাল পুলিশ পাঠানো হয়। কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। উত্তেজিত জনতার দিকে বন্দুক তাক করতে দেখা যায় এক পুলিশকর্মীকে। পাল্টা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি হয়। হামলার মুখে পড়ে পুলিশও ইট ছোড়ে। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।