জয়দীপ হালদার, সাগর: প্রায় ২০ মাস কেটে গেছে। এতগুলো মাসে অতিমারীর সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগও নেহাত কম বিপদে ফেলেনি। প্রবল ঝড়ে উড়ে গেছে স্কুলের তিনতলার ছাদ, ভেঙে পড়েছে দরজা। স্কুলবাড়ির যত্রতত্র বড় বড় ফাটল। আমফান-ইয়াসের ক্ষত নিয়েই খুলছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরের বামুনখালির উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এই অবস্থাতেও তুঙ্গে স্কুল খোলার তোড়জোড়।


পুজোর ছুটির পর স্কুল। আগে এমনটা ভাবলেই মনখারাপ হয়ে যেত। কিন্তু, করোনাকালে যেন বিরামহীন ছুটি আর ছুটি। তাই এবার, স্কুল খোলার খবরটা উৎসবের চেয়ে কম কিছু নয়। অনলাইনের গণ্ডী পেরিয়ে ফের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা, টিফিন ভাগ করে খাওয়া, অনর্গল গল্প। মাস্টারমশাইয়ের ধমক না খেলে যা থামতেই জানে না। কিন্তু কোথায় ফিরবে সাগরের বামুনখালি মধুসূদন পেয়ারিমোহন পঞ্চানন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা? ঝড়ে উড়ে গেছে স্কুলের তিনতলার ছাদ। ভেঙে পড়েছে দরজা। দেওয়ালজুড়ে গজিয়ে উঠেছে আগাছা। স্কুলবাড়ির যেখানে সেখানে দেখা মিলছে বড় বড় ফাটলের। সিমেন্টের প্রলেপ সরে বেরিয়ে এসেছে ইটের কঙ্কাল। এককথায় যেন বিপজ্জনক। যেকোনও মুহূর্তেই ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। 


আমফানের পর ইয়াস। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে এমনই দশা দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরের বামুনখালির এই স্কুলের। ঠিক যেন ধ্বংসস্তুপ! সরকারি নির্দেশ এখনও হাতে আসেনি। তবে, সংবাদমাধ্যমে খবরটা দেখেই মেরামতির তোড়জোড় শুরু করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। ডেক্স-টেবিল থেকে সরছে ধুলোর পুরু প্রলেপ। 


বামুনখালি মধুসূদন পেয়ারিমোহন পঞ্চানন উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সমীরকুমার দাসের কথায়, 'পুরো স্কুলটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানের অনেক স্কুলেরই একই অবস্থা। আমরা সারাতে পারিনি। সবকিছু ভেঙে পড়েছে, তার মধ্যেই স্কুল খোলার চেষ্টা করছি।'


বামুনখালি মধুসূদন পেয়ারিমোহন পঞ্চানন উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সভাপতি শ্যমল দাসের কথায়, 'সরকারি নির্দেশ এখনও আসেনি। আমরা সংবাদমাধ্যম থেকে শুনে স্কুল খোলার প্রস্তুতি নিয়েছি। স্কুলের তিনতলার প্রায় ১২০ ফুট ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত। তবুও আমরা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী, স্কুল খোলার চেষ্টা করছি।'


অন্যদিকে মঙ্গলবার, ডায়মন্ড হারবার গার্লস হাইস্কুল পরিদর্শন করেন সেখানকার মহকুমাশাসক। ডায়মন্ড হারবারের মহকুমাশাসক সুকান্ত সাহার কথায়, 'বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করা হবে। পরিকাঠামো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনমতো সহযোগিতা করা হবে।'


কত মাস প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়নি। জমে রয়েছে কত না বলা কথা, আড্ডা। স্মৃতির পলি সরিয়ে ফের স্কুলে পা রাখার তোড়জোড় রাজ্যজুড়ে।