গৌতম মণ্ডল, দক্ষিণ ২৪ পরগনা : নিম্নচাপ ও অমাবস্যার কোটলের জোড়া ফলায় বিপর্যস্ত সুন্দরবন। রাতভর নাগাড়ে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি ও ঘন্টায় ৫০ কিমি বেগে দমকা বাতাস বইছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাজুড়ে। সকালেও দুর্যোগ অব্যাহত। দুর্যোগের জেরে পাথরপ্রতিমার গোবর্ধনপুরের উপকূল এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। টানা কয়েকটি কোটালে সমুদ্রের বাঁধ ভেঙে নোনা জল ঢুকেছিল এই এলাকায়। এরপর সাময়িকভাবে মাটির রিং বাঁধ দিয়ে জল আটকানোর চেষ্টা করে প্রশাসন। কিন্তু জলোচ্ছ্বাসের জেরে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে পুরো এলাকা। জলমগ্ন ৫০টিরও বেশি বাড়ি। এছাড়াও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সুন্দরবন এলাকায় জলমগ্ন বিঘের পর বিঘে জমি। দ্রুত জল না সরলে আমন চাষ ও মরসুমি সবজির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা থাকছে।
আগামী কয়েকদিন এই দুর্যোগের পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস। সেক্ষেত্রে সুন্দরবনের সাগর, নামখানা, গোসাবা, পাথরপ্রতিমা, কুলতলির বেহাল বাঁধ নিয়ে চিন্তিত প্রশাসন। কাঁচাবাড়ির বাসিন্দাদেরও সতর্ক করা হচ্ছে। কারণ টানা বৃষ্টিতে মাটি আলগা হয়ে ভেঙে পড়তে পারে মাটির বাড়ি। জেলা, মহকুমা ও ব্লকস্তরে কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের মোতায়েন করা হয়েছে ব্লকগুলিতে। গঙ্গাসাগর, বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জ, মৌসুনিতে সমুদ্রস্নানের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এর আগেও কটালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসের জেরে একাধিকবার প্লাবিত হয়েছে এলাকা। পুকুরের মিষ্টি জলে ঢুকেছে নোনা জল। চাষের জমিও প্লাবিত হয়েছে। মাটির বাঁধে আর কাজ হবে না। সবই নরম আলগা হয়ে গিয়েছে, যেকোনও সময় ধস নামতে পারে। তাই প্রয়োজন কংক্রিটের বাঁধের। সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, উত্তর ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডে ঢুকে শক্তি হারিয়েছে নিম্নচাপ। কিছুটা দুর্বল হওয়ায় নিম্নচাপের প্রভাব ক্রমেই কমছে পশ্চিমবঙ্গে। আজ অর্থাৎ শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ ও তীব্রতা কিছুটা কমবে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। আগামী সপ্তাহের শুরুতে ফের বৃষ্টি বাড়বে বাংলায়। মঙ্গলবার থেকে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। দুই ২৪ পরগনায় অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে। আগামী সপ্তাহে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান ও ২ মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসও দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শুরু হয়েছিল বৃষ্টি। পূর্বাভাস ছিলই যে নিম্নচাপের জেরে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি হবে। সেই মতোই শুরু হয়েছিল বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি। শুক্রবার দিনভর প্রায় সব জেলাতেই বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তা ছিল ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ। তার জেরে জল জমেছে শহর কলকাতা থেকে শহরতলির বহু জায়গায়। বিশেষ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাগুলি জলমগ্ন হয়ে গিয়েছে। দ্রুত জল না নামলে বাড়বে বিপদ।