শান্তনু নস্কর, ক্যানিং: খুনের ঘটনায় ২০ বছর ধরে ছিলেন জেলে। স্মৃতিশক্তি হারিয়ে পথ ভুলেছিলেন বাড়ির। মনেও ছিল না ঘরের ঠিকানা। শেষমেশ সহায় হল হ্যাম রেডিও। অবশেষে বাড়ি ফিরলেন মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা সুরেশ মুদিয়া।


কী ঘটেছিল?


খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন তিনি। বিগত ২০ বছর জেল খেটেছেন। দীর্ঘদিন জেলে থেকে স্মৃতিশক্তি অনেকটাই লোপ পেয়েছে বছর পঞ্চাশের সুরেশ মুদিয়ার। মধ্যপ্রদেশের নরসিংপুরের বাসিন্দা সুরেশ। জেল থেকে ছাড়া পেলেও তাঁকে বাড়ি থেকে কেউ আসেননি। এতেই দিকবিদিক শূন্য হয়ে বেরিয়ে পড়েন। এদিক-ওদিক ঘুরতে ঘুরতে এসে পৌঁছন ক্যানিংয়ের দাঁড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ঠাকুরানবেরিয়া গ্রামে। সেখানেই দোকানের সামনে, কারও বাড়ির উঠোনে পড়ে থাকছিলেন তিনি। স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। কিন্তু সেভাবে নিজের সম্পর্কে কিছুই বলতে পারছিলেন না সুরেশ। অবশেষে হ্যাম রেডিওর সঙ্গে যোগাযোগ করেন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী রেকাউল মণ্ডস কিন্তু হ্যাম রেডিও ক্লাবের সদস্যরাও হিমশিম খেয়ে যান সুরেশের পরিবারের খোঁজ পেতে। সঙ্গে থাকা আধার কার্ডেও ভুল ঠিকানা থাকায় সমস্যায় পড়েন তাঁরা। অবশেষে সুরেশের পায়ে থাকা ২৪ নম্বর জুতো দেখেই সম্পূর্ণ ঠিকানা মেলে তাঁর। যোগাযোগ সম্ভব হয় পরিবারের সঙ্গে।  


কীভাবে খুঁজে পেলেন ঠিকানা? 


চপ্পল নম্বর ২৪। আর পাঁচটা সাধারণ চপ্পলের মত দেখতে হলেও চপ্পলের উপরে দেওয়া নম্বর আর পাঁচটা সাধারণ চপ্পলের মতো নয়। কালো চটির উপর সাদা কালিতে লেখা নম্বরটা। আর এই নম্বরটাই শেষ পর্যন্ত সুরেশের পরিবারকে খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে হ্যাম রেডিও ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সদস্যদের। আসলে এই চপ্পল আর পাঁচটা সাধারণ চপ্পল নয়। কারণ এই চপ্পল হল জেলের চপ্পল। জেলের কয়েদিদের এই ধরনের চপ্পল পড়তে দেখা যায়। তা দেখেই মধ্যপ্রদেশের সেন্ট্রাল জেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন হ্যাম রেডিওর সদস্যরা। জানা যায় ভগ্নিপতিকে খুনের অপরাধে জেল খেটেছিলেন তিনি। সেন্ট্রাল জেলের ২৪ নম্বর সেলে ছিলেন সুরেশ। আর এই চপ্পল দেখে সেখানে খোঁজ নিতেই শেষ পর্যন্ত মেলে সুরেশের ঠিকানা। ছেলের ছবি দেখে চিনতে পারেন সুরেশের মা কান্তাবাই মুদিয়া। দীর্ঘদিন বাদে ছেলের ছবি দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।  


পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর ২০ আগে ভগ্নিপতিকে নিয়ে বাইকে চেপে বেরিয়েছিলেন সুরেশ। রাস্তা ভগ্নিপতির সঙ্গে কোনও বিষয় নিয়ে বচসা হয়। চলন্ত বাইক থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন তাঁকে। প্রায় সাতদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মৃত্যু হয় ভগ্নিপতির। সেই ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে কুড়ি বছর জেল খাটেন সুরেশ। হ্যাম রেডিও ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের দাবি, সুরেশের গ্রামের ঠিকানা প্রথমে পেলেও সেখানকার লোকজন তাঁর সম্পর্কে কিছুই বলতে চাইছিলেন না। যেহেতু খুনের অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে ফলে কেউই সঠিক ঠিকানা দিতে চাইছিল না। এরপর ওঁর পায়ের চটি দেখেই যাবতীয় সমস্যার সমাধান হয়। জেল থেকে মেলে যাবতীয় তথ্য। ওঁর মাকে সুরেশের ছবি দেখাতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। রেডিও ক্লাবের সদস্য দিবস মণ্ডল পুরো বিষয়টা দেখছেন। পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় আজ অর্থাৎ রবিবার পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সুরেশকে। তবে সুরেশকে কাছে পেয়ে খুশি তাঁর পরিবার। খুশি পুলিশ প্রশাসনও। পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের হাতে কিছু আর্থিক সহযোগিতা, খাবার ও নতুন পোশাক তুলে দেওয়া হয়। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশ প্রশাসন ও হাম রেডিওকে ধন্যবাদ জানানো হয়।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে। 


আরও পড়ুন: Coochbehar News: পড়ুয়াদের স্বাবলম্বী করতে উদ্যোগ, রোজগার মেলার আয়োজন রাজ্যের এই কলেজে